অপ্রেমের কাব্য-৬
এমপি'র বাড়ি থেকে বের হল রাত বারোটার দিকে।মুহীন উশখুশ করছে, কী করে তার বাড়ি যাওয়ার কথাটা বলবে৷ গাড়িতে বসে ইশা ঝিমুচ্ছে৷ মুহীন বার কয়েক ইশার দিকে তাকালো৷ কিন্তু ইশার সে দিকে খেয়াল নেই। মুহীন ভেবেছিল আজ তার বাড়ি যাওয়া হবে না। সে মন খারাপ করে গাড়ি থেকে নামতে যাবে ঠিক তখন ইশার মা বলে উঠল
- আহা!তুমি নামছো কেন?তুমি বসে থাক৷ ইজহার তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিবে৷ তোমার ব্যাগ গাড়িতে তুলা ই আছে।
ইশা ঘুম ঘুম চোখে বলল
-দ্রুত চলে আসবি৷
মুহীনের মুখে হাসির রেখা চিহ্নিত হলো। আহা! অবশেষে সে বাড়ি যাচ্ছে।
গাড়ি কিছু দূর চলার পর ইজহার হুট করে গাড়ি থামিয়ে দিল৷ মুহীন হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
-সেকি!গাড়ি থামালেন কেন?
ইজহার কোন কোন কথা না বলে গাড়ি থেকে নেমে মুহীনের পাশের গাড়ির দরজা খোলে বলল, নেমে এসে সামনে গিয়ে বস। মুহীন যেন আকাশ থেকে পড়ল সামনে বসার কথা শুনে। ইজহার আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে বলল
-খালি গাড়ি,পেছনে বসলে ঝাঁকি খাবে৷ রাস্তা ভালো না।
মুহীন গাড়ি থেকে নামতে নামতে মিনমিন করে বলল
-রাস্তা তো ভাঙ্গা থাকবে ই৷ ঠিক করে না৷ বালের মেয়র।
ইজহার ঠিক বুঝতে পারল না কী বলেছে মুহীন। ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল
-কী বললে?
মুহীন তার উত্তর না দিয়ে সামনে গিয়ে বসল। ইজহার মাহমুদের পাশের সিটে।
ইজহার গাড়িতে স্টার্ট দিতে দিতে বলল
-তোমার গ্রামের নাম যেন কী?
মুহীন বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে উত্তর দিল
-সে কি! আপনি আমাদের গ্রামের নাম জানেন না?
-নাহ জানি না। বল এবার
-মৈন্দ।আমাদের গ্রামের নাম মৈন্দ৷ এই পৌরসভার শেষ গ্রাম । আর আমাদের বাড়ি হচ্ছে শহরের শেষ বাড়ি। তারপর তো বুধল ইউনিয়ন। সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম আমাদের।
-সুন্দর না ছাই৷ চুর বাটপারের কারখানা।
-জ্বি না।চুর বাটপারের কারখানা তো শহরে৷
-মাত্র ই না বললে তোমরা শহরে।
-শহর বলিনি,পৌরসভা বলেছি।
-ঐ একি কথা৷
-জ্বি না,একি কথা না।
মুহীনের ঘুম পাচ্ছে সে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করল৷ গাড়ির জানালা খোলা। ফুলেশ্বরী নদী থেকে ঠান্ডা বাতাস আসছে। কুটকুটে অন্ধকার রাস্তা। মাঝে মাঝে রাস্তার বৈদ্যুতিক খুঁটির আলো গাড়িতে ঢুকে৷ ঠিক তখন ইজহার মুহীনের দিকে তাকায়।তার বুক কেঁপে উঠে৷ সে সত্য ই প্রেমে পড়েছে। নিষিদ্ধ এক প্রেমের উপাখ্যান লিখতে বসেছে সে।
হঠাৎ করে জোরে ব্রেক কষায় মুহীন সামনের দিকে ঝুঁকে গেল। সে চেঁচিয়ে উঠলো। ইজহার বলল
-আরে কিছু হয়নি৷ সামনে গর্ত। ঘুরিয়ে নিতে হবে।
মুহীনের বুক ধুকধুক করছে সে ভেবেছিল গাড়ি এক্সসিডেন্ট করেছে। বুকে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল
-আমি ভাবলাম আজ আমার জীবন লীলা সাঙ্গ।
ইজহার অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিল
-আমি থাকতে কিছু হতে দিলে তো।
মুহীন ঠিক বুঝতে না পেরে বলল
-কী বললেন?
-কিছু না৷ তুমি ঘুমাও। আর মিনিট দশেক বাকি।
মুহীন জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে বলল
-আপনি এমন কেন?
-কেমন?
-কেমন জানি,প্রায় বুঝি না আপনাকে।
-আমাকে বুঝে কি করবে শুনি?পরিক্ষায় তো আমার উপর কোন প্রশ্ন আসে বলে মনে হয় না।
-আসলে তো ভাল ই হত৷ আপনাকে পড়া যেত।
ইজহার তার একটা হাত মুহীনের হাতে রাখতে ই মুহীন কেমন চমকে উঠে ইজহারের দিকে তাকাল। ইজহার সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে৷ মুহীনের ভেতরে ঝনঝন করে কাচ ভাঙার শব্দ। ইজহার হাত সরিয়ে নিয়ে বলল
-তোমার হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে৷ জানালা বন্ধ করে দাও।
মুহীন তখনো ইজহারের দিকে তাকিয়ে ছিল। গাড়ি এসে থামলো মৈন্দ বাজারে। ইজহার মুহীনের দিকে তাকিয়ে বলল
-এখানে নামিয়ে দিলে যেতে পারবে?
মুহীন স্পষ্ট উত্তর দিল
-নাহ। বাড়ির সামনে নিয়ে যেতে হবে।
ইজহার কথা না বাড়িয়ে বাড়ির সামনে চলে গেল। মুহীন গাড়ি থেকে নেমে ইজহার কে বলল
-নেমে আসুন।
-আমি নামব না। আমাকে ফিরতে হবে।
মুহীন মাথা গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে ইজহারের হাত টেনে ধরে বলল
-নাহ!আপনি যাবেন না। এত রাতে আপনাকে একা ছাড়ব না।
-আরে নাহ,যেতে পারব।
মুহীন ইজহারের কথা না শুনে ই চিৎকার করে ওর বাবা মাকে ডাকতে লাগলো।
চিৎকার শুনে ওর বাবা মা দরজা খোলে দৌড়ে বের হয়ে এসে দেখে মুহীন। মুহীনের মা প্রায় কেঁদে ই উত্তর দিল
-অ আল্লাহ গো। আমারে বাপজান আয়ছে৷
মুহীনের বাবা গাড়ির কাছে এসে দেখে তার ছেলে মেয়র সাবের হাত ধরে টানাটানি করছে৷ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জনাব শিকদার বললেন
-মেয়র সাব আপনি?
ইজহার গাড়ি থেকে বের হয়ে শিকদার সাবকে সালাম দিল। শিকদার সাব সেই সালামের উত্তর না দিয়ে দৌড়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল কাকে যেন ডাকতে ডাকতে৷ মুহীন ইজহারের দিকে তাকিয়ে বলল
-আসেন না৷ ভয় পাচ্ছেন কেন?আপনাকে আমরা মেরে ফেলব না।
মুহীনের মা এসে মুহীনকে জড়িয়ে ধরল।মুহীন তার মাকে ইজহার মাহমুদকে দেখিয়ে বলল
-মা,ওনি ইজহার মাহমুদ৷ আমাদের মেয়র৷ পাশাপাশি আমার বন্ধু ইশার বড় ভাই।
ইজহার সালাম দিল। মুহীনের মা লজ্জায় মাথার কাপড় টেনে বলল
-অ আল্লাহ!আমাদের কী সুভাগ্য৷আসেন না, ভেতরে আসেন। এই ক্ষ্যাপা, মেয়র সাবরে বাসায় নিয়ে আয়।
মুহীন আবারো ইজহারের হাত ধরে টেনে বাসার দিকে নিয়ে গেল।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আশেপাশের মানুষ এসে ভিড় জমিয়ে ফেলল। এত রাতে শিকদার বাড়িতে মেয়র এসেছে৷ ইজহার সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলছিল বৈঠকখানায় বসে।কিন্তু সে বারবার এ দিক ওদিক তাকিয়ে মুহীনকে খোঁজছিল৷ রাত তখন দুইটা৷ ইজহারের যাওয়া দরকার৷ পরিস্থিতি যা দেখা যাচ্ছে ইজহার এখান থেকে সহজে ছাড়া পাচ্ছে না।ভিড় ঠেলে মুহীনের মা এসে ইজহারকে বাঁচালো৷ ওনি এক প্রকার চেঁচিয়ে ই বলল
-তোমরা এখন যার যার বাড়ি যাও৷ মেয়র সাব খাবার খাবে৷ সকালে এসো আবার৷ বলে ই তিনি একে ওকে টেনে বের করে বৈঠকখানার দরজা লাগিয়ে দিয়ে ইজহারের দিকে তাকিয়ে বলল
-এত রাতে আসছেন, গরিবের বাড়িতে যা আছে তা ই খানিক খেয়ে নেন৷
ইজহার কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু ভদ্রমহিলা সেই সুযোগ না দিয়ে আবারো বলল
-না শুনব না৷ এই ক্ষ্যাপা, এদিকে আয়৷ মেয়র সাবকে রুমে নিয়ে যা৷
ইজহার দরজার দিকে তাকালো। মুহীন দৌড়ে এসেছে৷ পেছন পেছন তার বন্ধু জীবন৷ মোটা,কালো ষাড়ের মত শরীর৷ মুহীনকে খুব আনন্দিত লাগছে৷ ইজহার এমন খুশি মুহীনকে খুব কম দেখেছে। ইজহার মুহীনকে ইশারায় কাছে ডাকলো। কিন্তু মুহীন সেটা বুঝে ও না বুঝার ভান করে বলল
-মেয়র সাব,আসুন। আমাদের মেহমানদারির খানিক সুযোগ দেন৷
ইজহার অনিচ্ছায় উঠে মুহীনের পিছে পিছে গেল। ইজহারকে মুহীনের রুমে বসানো হল।ছোট একটা রুম৷ রুমে একটা বুকসেলফ,একটা পড়ার টেবিল। আর একটা খাট ছাড়া তেমন কিছু নেই৷ দেয়ালে মুহীনের ছোট বেলার অনেক ছবি৷ হাসিখুশি সুন্দর এক শিশু।দেখে ই বুঝা যায় খুব আদরে বড় হয়েছে। ইজহার মুহীনের দিকে তাকালো। এত রাত হয়ে গেছে অথচ তার চোখে কোন ঘুম নেই৷ সে বাঁকা চোখে ইজহারকে বারবার দেখছিল৷ বেশ গরম পড়েছে। মুহীন জানালা খোলে দিল।
বাহির থেকে ফুরফুরে হাওয়া আসছে৷ ইজহার বাহিরের দিকে জানালা দিয়ে তাকালো৷
মুহীন চারপাশে একবার দেখে নিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ইজহারের গালে চুমু খেয়ে দৌড়ে বের হয়ে গেল। পরিস্থিতি বুঝতে ইজহারের খানিক সময় নিল৷ কিন্তু যখন সে বুঝে উঠলো, ততক্ষণে মুহীন আর রুমে ছিল না৷ এক অদ্ভুত ভালো লাগায় ইজহারের মন ভরে গেল।তার মনে হলো সে পেয়েছে৷ এতকাল যে সুখের জন্য ছটফটিয়েছে সেই সুখের সন্ধান৷
খাওয়া দাওয়া শেষ করতে করতে আরো রাত৷ ইজহার খেতে চাচ্ছিল না৷ কিন্তু কাউন্সিলর আর মুহীনের বাবার জোরাজোরিতে না খেয়ে পারলো না। এই অল্প সময়ে খাবারের আয়োজন ছিল প্রচুর৷ খাওয়ার সময় মুহীনকে দেখতে পায়নি ইজহার৷ সে বার কয়েক এদিক ওদিক তাকিয়েছে কিন্তু মুহীন ছিল না আশেপাশে কোথাও।
ফেরার সময় ও মুহীনকে পায়নি ইজহার৷ তার মন খারাপ হলো৷ গাড়িতে উঠতে উঠতে সে সবার কাছ থেকে বিদায় নিল৷
রাতটা এভাবে ই চলে গেল। মুহীন আর বাকিরা কেউ ই ঘুমায়নি৷ মুহীন তার মায়ের সাথে বসে বসে ভার্সিটির গল্প করছিল৷ আপুর শুশ্বড়বাড়ির কথা বলছিল। কথার মাঝখানে মুহীনের মা জিজ্ঞেস করল
-হে রব ক্ষ্যাপা,মেয়র সাব তুকে খুব স্নেহ করে তাই না?
মুহীন মায়ের কথার উত্তর দেয়নি৷ তার মনে পড়তে লাগল পুরাতন কথাগুলো।যেখানে স্নেহের কোন ছিটেফোঁটা ও ছিল না৷ তারপরে ও মুহীনের মনে হল,লোকটা তাকে আকর্ষণ করে৷ কিসের টানে যেন মুহীন বারবার তার কাছে ছুটে যায়। এক অজানা অনুভূতি কাজ করে ইজহার মাহমুদের প্রতি তার। কী নাম সেই অনুভূতির তা মুহীনের জানা নেই।
মুহীনের মা আবারো একি প্রশ্ন করল। মুহীন সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পুকুর ঘাটে গিয়ে বসল৷ সকাল হতে শুরু করেছে৷ পুকুর পাড়ে হিজল ফুল ফোটে লাল হয়ে আছে। মুহীন কিছু হিজল ফুল দিয়ে পুকুরের ঘাটের সিড়িতে নিজের নাম লিখলো।ভোরের সদ্য ফোটা আলোতে সেই নাম তার কাছে অসম্পূর্ণ লাগছিল৷ তার মনে হলো সে খুব একা৷অথচ এমনটা মনে হওয়ার মত কোন যুক্তিক কারন ও নেই৷ বয়সন্ধিকালের পরে সে যে রকম যৌন আকর্ষণ অনুভব করতো বর্তমানে সেই আকর্ষণ বা অনুভূতি যেন আরো প্রকট হচ্ছে। একজন পুরুষের প্রতি এ প্রেম অনুভূতির কী নাম?
সকালে ইজহার বাড়ি ফিরে যে ঘুম দিয়েছিল সেই ঘুম ভাঙতে ভাঙতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল। ঘুম থেকে জাগার পর তার মন কেমন ছটফট করছিল মুহীনকে একবার দেখার জন্য।কবে ফিরবে সে শহরে,কবে তাকে দেখবে সেই জন্য মন তার উদগ্রিব হয়ে আছে।
সকালে স্থানীয় খবরের কাগজ পড়ছিল। সেখানে শারমিন সুলতানার বক্তব্য ছাপিয়েছে৷ আসন্ন নির্বাচনে মেয়র হওয়ার জন্য সে কতটা উদগ্রীব তা তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হচ্ছে৷ ইজহারের মনে হল,শারমিন সুলতানার মূল উদ্দেশ্য মেয়র হওয়া নয় বরং ইজহারকে অপদস্ত করা৷ কিসে তার এত রাগ?ইজহার স্বেচ্ছায় তো আর তার সংসার ভাঙ্গেনি৷ বরং সে তার স্বামীকে কখনো ধরে রাখতে ই চায়নি।
ইজহারের মনে হলো এসব রাজনিতীতে তার জড়ানো একদম ই উচিত হয়নি৷ মিছে নোংরা খেল৷ এ খেল থেকে তার দূরে থাকা ই উচিত ছিল।
ইজহারের ফোন বেজে উঠলো। সে পকেট থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফোনটা না ধরে রেখে দিল৷ যখন দ্বিতীয়বার আবার বাজলো তখন সে ফোনটা ধরল৷
-হ্যা বলো৷ কিছু বলবে?
ওপাশ থাকে বলল
- কেমন আছ
- কী জন্য ফোন করেছ সেটা বলো।
-আমার শুশ্বড়বাড়ি কেমন লাগলো?
ইজহারের মনে হলে সে ভাল করে শুনেনি। আবার প্রশ্ন করল
-কী বললে?
-কাল যে আমার শুশ্বড়বাড়ি গিয়েছিলে,তা কেমন লাগলো তোমার কাছে?
ইজহারের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। সে যেন কোন কিছু বিশ্বাস ই করতে পারছে না। এ কী শুনলো সে?মুহীনদের বাড়ি তোফায়েলের শুশ্বড়বাড়ি? তারমানে মুহীন তোফায়েলের শালা?এ কি ভুল হয়ে গেল ইজহারের?যে মানুষটার জন্য এত অপদস্ত হতে হয়েছিল তাকে। যে মানুষটা তাকে দিনের পর দিন মিথ্যার অন্ধকারে রেখে ভালোবাসার অভিনয় করে নিজে সংসার পেতে বসেছিল সেই মানুষটার ছায়া আবার তার জীবনে?
মুহীন তোফায়েলের শালা জানলে তো কোন দিন এতটা কাছে যেতো না তার। এত ভালোবাসার আবেগে ও জড়াতো না। ভয়ানক এক ঘৃণা,রাগ,ক্ষোভে মন ছেঁয়ে গেল তার। কী করবে সে?কী করবে এখন।
ফোনটা বেজে ই যাচ্ছে৷ ইজহার রাগে তার একটা পা ফোনের উপর রাখলো। সজোরে আঘাত করতেই ফোনটা ভেঙ্গে চুরচুর হয়ে গেল। ইজহারের মা ছুটে এসে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো। মায়ের মমতাময়ী স্পর্শে তার রাগ যন্ত্রনায় বদলে গেল৷ বাচ্চা ছেলেদের মত কেঁদে উঠল ইজহার। এভাবে এর আগে ও ইজহার অনেক বার কেঁদেছে।কিন্তু আজকের কান্নাটা ভিন্ন।
মুহীন এসবের কিছুই জানে না৷ তার জানার কথা ও না। সে এক অদ্ভুত আবেগে জড়িয়ে গেছে৷ বাড়ি আসার জন্য ছটফটিয়ে মরা মুহীন এখন ভার্সিটি যেতে ছটফট করছে৷ অথচ ভার্সিটি খোলতে আরো দু'দিন বাকি৷ মুহীন নিজে ও বুঝতে পারছে না ইজহারকে দেখার জন্য তার মন এত কাতর কেন?মনের ভেতর যে সুপ্ত বাসনা মুহীন চেয়ে ও তা বাহিরে আনতে চাচ্ছে না৷ ভয় আর প্রেমের অদ্ভুত এক অনুভূতি তার মনকে গ্রাস করে রেখেছে।
ইজহার দু দিন ধরে বাসার বাহিরে যাচ্ছে না৷ পৌরসভায় তার অনেক কাজ পড়ে আছে কিন্তু তার যেতে ইচ্ছে করছে না। আজ ইশার ইউনিভার্সিটি খোলা।ইশার ইউনিভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করছে না৷ মুহীন নেই৷ জয়তার সাথে হয়তো যাওয়া যায় কিন্তু মুহীনকে ছাড়া ওর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। ইশা এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বারান্দা থেকে তাদের বাগান দেখা যায়৷ বাগানে ইজহার কাজ করছিল৷ তার হাত পা মাটিতে ভরে আছে। ইশা জানে তার ভাইয়ের যখন মন খারাপ হয় তখন সারাদিন বাগানে পড়ে থাকে। তারমানে আজ তার ভাইয়ের মন খারাপ। ইশার চোখ ভিজে এলো। তার এত ভালো মানুষ ভাইটা কেন যে এমন বদলে গেলো। ইশা তার ভাইকে ডাকলো
-ভাইয়া,এই ভাইয়া
ইজহার না তাকিয়ে ই জবাব দিল
-বল কী বলবি
-কফি খাবে?
-না৷
-তাহলে চা দিব?
-নাহ৷
-জুস?
-চুপ কর৷ কাজ করতে দে।
-কী করছ?
-আজ কি কলেজ নেই?
-আছে৷ কিন্তু যাব না।
-কেন যাবি না?
-মুহীন আসেনি৷ একা যেতে ইচ্ছে করছে না।
মুহীন নামটা ইজহার কানে যাওয়ার সাথে সাথে ওর মন যেন কেমন হয়ে গেল। মনে হলো, মুহীন তার খুব আপন। যাকে সে কাছে টানতে পারছে না৷ কোন এক শিকল তাকে আটকে রেখেছে৷ ইজহার বাগান থেকে রুমে চলে গেল। ইশা বুঝে পেল না তার ভাইয়ের কী হয়েছে৷
ইজহার গোসলখানায় ঢুকে সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পড়লো। তার শরীররের মাটি পানির সাথে ভেসে যাচ্ছে৷ কিন্তু ভেতরের রক্তক্ষরণ? কাউকে কাছে পাওয়ার আগে ই তাকে দূরে ঠেলে দিতে হচ্ছে। জীবন এত কঠিন,এত দুর্বিষহ না হলে ও পারতো৷ এতে হয়তো টিকে থাকাটা তার জন্য এত জটিল হতো না।
মুহীন ফিরলো বিকেলের দিকে সন্ধ্যা গড়ানোর আগে৷ তার আপু তখন রান্না ঘরে৷ মুহিনকে আসতে দেখে রান্না ফেলে ছুটে গেলো৷ তার বাড়ি সম্পর্কে অনেক কিছু জানার আছে৷ কে কেমন আছে?এবার ফসল কেমন হলো৷ পুকুরে মাছ হয়েছে কিনা৷ রাজহাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটলো কিনা। মুহীন বোনের সাথে হাসি মুখে কুশলাদি শেষ করে ই ছুটলো ফোন চার্জ দিতে। ইশাকে ফোন দিবে সে৷ কাল রেজাল্ট হওয়ার কথা। কলেজে যেতে হবে৷ তারমধ্যে সব চেয়ে বড় যে আবেগ কাজ করছে সেটা হলো,ইজহারকে একবার চোখের দেখা, দেখা।
ইশা ফোন উঠায়নি। ফোন উঠিয়েছে ইজহার। মুহিন কথা বলার আগে ই ইজহার বলল
-ইশা বাসায় নেই।
মুহীন কী বলবে বুঝে না পেয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলো
-কেমন আছেন মেয়র সাব?
ইজহার ফোন কেটে দিল৷ মুহীনের বুকে ফোন কাটার শব্দটা হৃদয়ের তার কাটার মত হয়ে বিধলো৷
......চলবে
অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে। প্লিজ পরের পার্টটা একটু তাড়াতাড়ি আপলোড দিয়েন।
ReplyDelete