গল্প:-অপ্রেমের কাব্য-২
লেখক:-আরভান শান আরাফ
বুধল ইউনিয়নে ইজহারের সমাবেশ ছিল। সেখান থেকে ফিরতে ফিরতে রাত। সারা হাত পায়ে ব্যথা,মাথায় ব্যথা নিয়ে সে সোজা তার মায়ের রুমে চলে গেল। ইজহারের মা এশার নামাজ পড়ে কুরান পাঠ করছিল৷ ইজহার কে আসতে দেখে কুরান পাঠ থামিয়ে ছুটে গেলো।
-ইজহার,শরীর খারাপ লাগছে নাকি?
ইজহার কিছু না বলে মায়ের পাশে বিছানায় ধপাস করে শুয়ে পড়ল৷ ইজহারের মা গ্লাসে পানি ঢেলে তাতে ফুঁ দিয়ে ইজহারের দিক বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-নে খোকা৷ পানিটা খেয়ে নে।
ইজহার বালিশে হেলান দিয়ে বসে পানিটা খেতে খেতে বলল
-আমার এসব ভাল লাগে না।
-কী এসব?
-এই নেতা সেজে বসে থাকা৷ মিছিল,মিটিং, সমাবেশ৷
-না লাগার ই কথা৷ এই অল্প বয়সে এত চাপ নেওয়া কঠিন।
ইজহার চুপ হয়ে গেল৷ ইজহারের মা উঠে দাঁড়াত দাঁড়াতে বলল
-ভাত বাড়ছি৷ একটু জিরিয়ে খেতে এসো৷
-আচ্ছা।
মুহিনকে ওর দুলাভাই ভার্সিটি যেতে নতুন সাইকেল কিনে দিয়েছে৷ আগেরটা ছিল মরিচা ধরা,ভাঙ্গাচুরা। এখনকার সাইকেলটা খুব সুন্দর৷ সাইকেলের লোভ দেখিয়ে মুহিন কে বোনের বাসায় রেখে দিয়েছে৷ মুহিন ও ভাবল সুবর্ণাকে ছেড়ে ওর বাড়িতে থাকাটা কষ্টের হয়ে যাবে। তাছাড়া এখানে যতেষ্ট যত্ন আর স্নেহ ও সে পাচ্ছে।
সকালে হালকা খাবার খেয়ে আয়নায় নিজের চেহারাটা বার কয়েক দেখে নিজের রূপে নিজে ই মুগ্ধ হয়ে সাইকেলে টিং টং শব্দ করে ভার্সিটির দিকে চলল।
বাড়ি থেকে মিনিট দুয়েক যেতেই দেখে একজন বৃদ্ধা পথের ধারে কৃষ্ণচূড়া কাছের নিচে বসে আছে৷ মুহিনের মনে হল,বৃদ্ধা অসুস্থ্য৷ মুহিন সাইকেল থেকে নেমে বৃদ্ধার কাছে গেল৷
-কী গো দাদি,এখানে বসে আছ যে।
বৃদ্ধ অশ্রস্নিগ্ধ চোখে বলল
-হুনছিলাম এহানে চাইল দিব৷ বাইত থেকে রেশন কাড নিয়া বাইর হয়ে আয়ছি৷ এখন হুনি বাজারের গদিতে নাকি দিবে৷ আমার জ্বর৷ আর হাঁটতে পারছি না ভাই।
মুহিন রেশনের কার্ডটা নিয়ে বলল,
-তুমি বসে থাক৷ আমি রেশন নিয়ে আসছি।
-সত্য ভাই?আইননা দিবা?
-এনে দিব৷ তুমি বসে বসে সাইকেলটা পাহারা দেও।
মুহিন বাজারের উদ্দেশ্যে হনহন করে হেঁটে চলল। বুড়ি গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো৷
বাজারে মেয়রের গদি৷ সেখানে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।মুহিন রেশন কার্ডটা নিয়ে লাইনে দাঁড়ালো এক মহিলার পেছনে৷ মহিলা লম্ভা ঘোমটা দিয়ে রেখেছে৷ পেছন ঘুরে মুহিনের দিকে একবার তাকিয়ে নিজে নিজে ই বলল
-গতবারের চাইল গুলাতে কাকড় ছিল৷ খাওয়া যায়নি৷ হেরা দিবে যখন ভাল চাইল দিলে ই ত হয়
মুহিন একবার উঁকি দিয়ে সামনে তাকালো৷ চার পাঁচ জন সামনের দিকে। একজন সাদা দাঁড়িওয়ালা লোক বেশ বড় সড় একটা চটের ছালা দিয়ে ভরে চাল দিচ্ছেন৷ হঠাৎ করে মুহিনের বুক মোচড় দিয়ে উঠল। তার মনে হলো কোন একটা অঘটন ঘটবে৷ ঐ যে কথা আছে না,যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়৷ আজ সেই কথাটায় সত্য হলো। সামনে ইজহার মাহমুদ। মুহিন বার কয়েক ডুক গিলে গলা ভিজিয়ে নিয়ে সামনের দিকে গেল।
ইজহার মাহমুদ সামনের চেয়ারে বসে ছিল। মুহিন কে দেখে তার গত দিনের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল৷ সে অবাক চোখে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে সেদিনের স্বপ্নের কথাটা ভাবছিল। পাশে থাকা দাড়িওয়ালা লোকটা বলল
-আব্বাজান,আর অল্প কয়েক জন বাকি আছে৷ আপনি ভেতরে গিয়ে বসে থাকুন৷ আমি দিয়ে দিব।
ইজহার অন্যমনস্কা হয়ে ই বলল
-নাহ নাহ।আমি দিব৷ আমি দিয়ে ই যাব।
মুহিন কাছে গিয়ে চোখ বন্ধ করে আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।দাড়িওয়ালা লোকটা তার হাতে বস্তা দেওয়ার আগে একবার ভালো করে তাকিয়ে বলল
-এই ছেলে,তোমাকে তো গরিব মনে হচ্ছে না৷ তুমি কার ত্রাণ নিচ্ছ?রেশন কার্ড দেখি।
মুহিন চোখ খোলে শার্টের পকেটে হাত দিয়ে দেখে রেশন কার্ড নেই। সে হতভম্ব হয়ে ইজহার মাহমুদের দিকে তাকালো। ইজহার মাহমুদ দাড়িওয়ালা লোককে উদ্দেশ্য করে বলল
-ওকে বাদ দেন কাকা৷ নেশা টেশা করে হয়ত। নিয়ে বেচে ই দিব। পরের জন কে দেন।
ইজহার মাহমুদের কথাটা শুনে মুহিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে হতাশ গলায় বলল
-এটা কোন ধরনের কথা৷ কার্ড তো ছিল ই আমার কাছে৷ দাঁড়ান আমি দেখছি।
ইজহার রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে বলল
-যা, দূর হ এখান থেকে।
মুহিন আশাহত হয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখে লম্বা ঘোমটা দেওয়া মহিলাটা রেশন কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-দেখ ত, এইডা মনে হয় তোমার কার্ড। অ স্যার, ইডা এই ছেলের কার্ড ওরে রেশন দিয়া দেন।
দাড়িওয়ালা লোকটা কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখে এটা মাজেদা বানু নামের কারো।
-এই ছেলে,মাজেদা কে?
ঠিক সেই সময় বৃদ্ধা ছুটে এলো। সে এসে বিষয়টা পরিষ্কার করে সব খোলে বলল।
মুহিন চালের বস্তাটা নিয়ে বৃদ্ধাকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে সাইকেল নিয়ে ভার্সিটিতে গেল।
ইজহার সারাদিন আজকের ঘটনা ভেবেছে৷ মিছে মিছে ছেলেটা হেয় করেছে। যে অন্যের জন্য ত্রাণের লাইনে দাঁড়াতে পারে তাকে এভাবে ছোট করা উচিত হয়নি ওর৷ নিজের প্রতি নিজের রাগ হচ্ছিল। যতবার ছেলেটা ওর সামনে এসেছে ততবার সে ওর ক্ষতি করেছে। এমনটা কেন হয়?সে তো আগে এমন ছিল না৷ বাবা মারা যাওয়ার পর তার স্বভাব কেমন যেন বদলে গেল। জীবন যেন তাকে কোথায় আটকে দিয়েছে৷ নিজের স্বপ্ন,ইচ্ছে,কামনা বাসনা সব যেন বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে। একজন কে ভালোবেসেছিল সে। সমাজের নিয়মের তোয়াক্কা না করে তারা চেয়েছিল একত্রে বাঁচতে কিন্তু হুট করে বাবা মারা যাওয়ার পর সে ব্যস্ত হয়ে যায় আর তিল তিল করে গড়া প্রেমের সম্পর্কটা একদিন ভেসে গেল হতাশার বাণে।
ইজহার নিজের সেক্সুয়্যাল অরিয়েন্টেশন নিয়ে প্রাণ খোলে বাঁচতে চেয়েছিল কিন্তু আজ সে সমাজের নেতা সেজে বসে আছে।
রাতে এসব ভাবতে ভাবতে ওর একদম ঘুম হয়নি৷ মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ে সে যখন রুম থেকে বের হলো তখন দেখে ইশা সেজে গুজে বের হচ্ছে৷ ইশা ইজহার কে দেখে বলল
-ভাইয়া, টাকা দাও তো।
ইজহার সোফায় বসতে বসতে বলল
-আমার রুমে আমার ওয়ালেট৷ সেখান থেকে নিয়ে নাও গিয়ে। তা সেজে গুজে কোথায় যাচ্ছ?
-বন্ধু আজ ট্রিট দিবে৷
-কিসের জন্য?আর কোন বন্ধু?
-এত জেরা কেন?
-শুনি তো। ছেলে বন্ধু নাকি মেয়ে বন্ধু?
-ছেলে বন্ধু। চিন্তা নেই ভাইয়া,প্রেম করব না।
ইজহার আর কথা বাড়ালো না৷ ইশা বড় হয়েছে৷ ওকে ওর মত ছেড়ে দেওয়া উচিত৷ অধিক চাপ ওর মানসিক অশান্তি তৈরি করতে পারে৷
ইশা আর মুহিনের মধ্যে খুব দ্রুত বন্ধুত্ব হয়ে গেছে৷ একি ডিপার্টমেন্টে পড়ার কারনে আন্তরিকতাটা যেন আরো বেড়েছে৷ মুহিন ভেবেছিল সে একা হয়ে যাবে৷ কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তির শুরুর মাসে ই তার বেশ কয়েক জন বন্ধু হয়ে যায়৷ ইশার সাথে মুহিনের বন্ধুত্বের শুরুটা খুব চমৎকার। মুহিন ক্যান্টিনে বসে কোল্ড কফি খেতে খেতে ঘামছিল। পাশের সীটে ইশা এসে বসে বলল
-এই ছেলে,কী খাচ্ছ?
মুহিন লজ্জায় লাল হয়ে উত্তর দিল
-কোল্ড কফি।
ওর হাত থেকে কফি জারটা ছোঁ মেরে নিয়ে একটু চুমুক দিয়ে বলল
-ইয়াক!তেতো হয়ে গেছে।
-হ্যা,এখানকার কোল্ড কফিটা ভালো না। আমাদের বাসার সামনে একটা শপ আছে। ওদেরটা ভালো হয়।
-তাহলে কবে খাওয়াবে?
মুহিন অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো
-এ কেমন মেয়েরে বাবা।এভাবে যেছে কেউ ট্রিট চায়?
ইশা বলল
-অবাক হচ্ছ নাকি?একি ক্লাসে পড়ি তাই এমন ফ্রীলি কথা বলছি। আর তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে৷ কয়েক দিন থেকে ই দেখছি। ক্লাসে সবচেয়ে বেশি মনোযোগী। চুপচাপ একা একা থাক৷ খুড়িয়ে হাঁট তাই ভাবলাম আমাদের বন্ধুত্ব হলে ভালো হয়৷
মুহিন মুচকি হেসে বলল
-তা অবশ্যই৷ খুড়িয়ে হাঁটি বলে কেউ পছন্দ করল শুনে খুশি হলাম।
-আরে তা নয়।
দুজন ই হেসে উঠলো। তাদের হাসি তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সৌন্দর্যতার স্বরূপ।
সেদিন ক্লাসের ফাঁকে আড্ডার মাঝে ইশা সবাইকে তাদের বাসায় মিলাদের দাওয়াত দিয়ে বসল। সবাই তো অবাক। ইশাকে যারা শুরু থেকে চিনে তারা জানে ইশা এমন ই।তাই কেউ অবাক হয়নি৷ কিন্তু মুহিন অবাক হয়ে বলল
-কিসের মিলাদ?
-আমাদের নতুন শপিং মলের মিলাদ।
-উ!
-তুই কিন্তু চলে আসবি৷ গাড়ি পাঠাব?
-আরে না৷ সুমনের সাথে চলে যাব৷
ইশা সুমনের দিকে তাকিয়ে বলল
-কিরে,নিয়ে যাবি ত,নাকি?
-আজ সন্ধায়, তরা দ্রুত চলে আসবি। মিস করবি না কেউ৷ আমি অপেক্ষা করব।
মুহিন পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে নিজের রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হচ্ছে দেখে ওর সুবর্ণা আপা ছুটে এলো।
-কিরে, এই সন্ধ্যা বেলা কোথায় যাচ্ছিস?
-আপা,ইশাদের বাসার মিলাদে।
-রাত হবে না তো।
-নাহ,রাত হবে না।
-রাত হলে তোর দুলাভাইকে পাঠাব গাড়ি দিয়ে৷
-আসতে পারব। চিন্তা করো না।
সুবর্ণাকে আশ্বস্ত করে মুহিন বের হয়ে দেখে সুমন রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে৷
মুহিন অজ্ঞাত ছিল ইশা সম্পর্কে। সে জানত না যে ইশা ইজহার মাহমুদের আদরের ছোট বোন৷ যে ইজহার মাহমুদ তার আশেপাশে থাকা মানে ই বিপত্তি, আজ মনের অজান্তে সে বিপত্তির সামনে গিয়ে দাঁড়াবে৷ ইশাদের আলিশান বাড়ি৷ মুহিন বাড়িতে পা দিয়ে চমকে উঠল৷ সুমনকে লক্ষ্য করে বলল
-এ যে রাজপুরী! কারা থাকে এই বাড়িতে?
সুমন বেখেয়ালি মনে উত্তর দিল
-ইজহার মাহমুদ?
মুহিনের মনে হল সে ভুল শুনেছে৷ পা থামিয়ে আবার প্রশ্ন করল
-কে থাকে বললি?
-ইজহার মাহমুদ।
মুহিনের হাতে কিছু গিফট ছিল৷ সে সেগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে ভাবল একবার উলটো পথে দৌড় দেওয়া যাক। ইজহার মাহমুদের বাড়ি যাওয়ার মত ভুল সে করতে পারে না৷ কিন্তু গিফটগুলোর কী করবে?
বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেল মুহিনের হাত পা।সে ভয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ ঠিক তখন ইশা দৌঁড়ে এলো। মুহিন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
-কীরে মুহিন, দ্রুত আয়৷
মুহিন তখনো দাঁড়িয়ে৷ ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশা এসে ওর হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে গেল৷ ভেতরে মুহিনের বব্ধু বান্ধব আর দু তিন জন আত্মীয় স্বজন ছাড়া কেউ নেই৷ মুহিন একবার বাড়ির দিকে তাকালো। বিশাল বাড়ির নিচ তলাটা ডাইনিং। উপরে তলায় বেড রুম আর বাকি রুমগুলো। ঘরের সর্বত্র আভিজাত্যের ছোয়াঁ৷
বা দিকে জাজিম বিছিয়ে চাদর ছড়ানো আছে৷ ছোট ছোট কিছু বাচ্চা ছেলে সেখানে সুর করে কুরান পড়ছে৷ অপর পাশে দুজন হুজুর কোন পান চিবিয়ে চিবিয়ে ইশার আম্মুর সাথে কথা বলছে।
ইশা ওড়নাটা মাথায় দিয়ে ওর মায়ের কাছে গেল৷ ইশার মা মুহিনদের পাশে এসে দাঁড়াতে সবাই সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করছিল৷ কিন্তু মুহিন ঘাবড়ে আছে৷ সে তার হাতের নখ কামড়ে যাচ্ছে৷ ইশা মুহিনের দিকে ইশারা করে বলল
- মা,ও মুহিন।
ইশার মা মুহিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
-কেমন আছ বাবা?
মুহিনের সে দিকে খেয়াল নেই। সে আনমনে নখ কামড়ে যাচ্ছে। ইশা মুহিনের শরীরে ঝাঁকি দিতেই ওর হুশ ফিরল।
-কিরে হাদারাম,মা কী বলল শুনলি না?
মুহিন বিমর্ষ চেহারায় উত্তর দিল
-ভালো আছি খালাম্মা। আপনি কেমন আছেন?
ইশা মুহিনের মুখে খালাম্মা শুনে মুখ টিপে হাসতে লাগল।
খানিকবাদে মোনাজাত হবে। মুহিন আর অন্যরা চা খেতে খেতে গল্প করছিল। ঠিক তখন মুহিনের মনে হচ্ছিল,ওর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত বের হতে হবে বাসা থেকে।কবে মোনাজাত শেষ হবে সেটা ভাবছে।
মুহিন আনমনে মাথা নিচু করে বের হওয়ার প্রতিক্ষা করছিল৷ ঠিক তখন ইশা ওর ভাইকে ওদের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলল
-এই দেখ,এই সিটির সবচেয়ে ইয়াং মেয়র৷ সুদর্শন নেতা৷ আমার ভাই।
মুহিন একবার মাথা তুলল৷ভয়ে তার বুক ধুক ধুক করতে লাগলো৷ ইজহার অন্য ছেলেদের সাথে হ্যান্ডশেক করা শেষে যখন মুহিনের দিকে হাত বাড়াল তখন তাদের চোখাচোখি হলো।ইজহার মাহমুদ মুহিনকে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো
-তুমি?এখানে?
মুহিন ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। উত্তর দিলো ইশা,
-ভাই, ওর নাম মুহিন৷ ভার্সিটিতে আমার একমাত্র বন্ধু৷
ইজহার মাহমুদ এক প্রকার ভৎসনা করে ই বলল
-কিরে ইশা,ভার্সিটিতে কি আর ভালো কাউকে পেলি না?এসব ছেলেদের সাথে মিশতে হচ্ছে?
ইশা রাগি রাগি চোখে প্রায় ধমকের সুরে বলল
-দাদা,এসব কী বলছ?
ইজহার আর কোন কথা বলেনি৷ মুহিন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল৷ যাক বাবা আজ আর অধিক কিছু বলেনি।
সেদিন মুহিন খুব কাছ থেকে ইজহার মাহমুদকে দেখেছিল৷ নেতা নয়,সাধারণ ঘরোয়া এক ছেলেকে৷ যে পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে ওদের প্লেটে খাবার বেড়ে দিয়েছে। কুরান পড়তে আসা ছোট ছোট বাচ্চাদের ব্যাগ ভরে গিফট দিয়েছে৷ হেসে কথা বলেছে।
ইজহার ও মুহিনকে কাছ থেকে সেদিন ই দেখেছিল৷ যে ছেলেটাকে প্রথম দেখায় ইজহার মাহমুদের কাছে সন্ত্রাসী আর নেশাগ্রস্ত মনে হয়েছিল, আজ দেখল সে কত স্নিগ্ধ, কত চমৎকার। ইজহার একটু দূরে দাঁড়িয়ে বারবার মুহিনের দিকে তাকিয়েছিল। মুহিনের বড় সুন্দর চোখ দুটির দিকে সে কেমন একটা টান অনুভব করছিল।পরক্ষণে নিজের সাথে লড়াই করেছে৷ এমন অল্প বয়সী একটা ছেলের প্রতি মানসিক টানের ফল ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না।নিজেকে সামলে তখন তো নিজেকে সামলে নিয়েছিল ইজহার কিন্তু রাতে বার বার ছেলেটার কথা মনে পড়েছে৷ এমন একটা অপরিচিত ছেলের জন্য রাত জেগে থাকতে থাকতে ভেতরে রাগ আর ক্ষোভ জেগে উঠলো। ইচ্ছে করছিল কোন একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে৷ ভয়াবহ কিছু৷ সে একজন সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব৷ তার এসব মানায় না৷
পরের দিন সকালে ভার্সিটিতে ছেলেদের মধ্যে একটা ঝামেলা মিমাংসা করতে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হলো বাইক নিয়ে৷ মুহিন তখন ক্যান্টিন থেকে এক কাপ কফি নিয়ে ল্যাবের দিকে যাচ্ছিল৷ ঐদিকে ইজহার তার বাইক থেকে নেমে তার একটা ছেলেকে ইশারায় পার্কিং করার নির্দেশনা দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল৷ হঠাৎ করে তার চোখ গেল মুহিনের দিকে। সে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। তার গতকাল রাতের কথা মনে হচ্ছিল। কীভাবে মুহিনের কথা ভেবে তার সারা রাত ঘুম হয়নি। কতটা ছটফট করে এই একটা ছেলের জন্য৷ হুট করে তার মাথা গরম হয়ে গেল৷ সে তার একটা ছেলে পাঠালো মুহিনকে ডেকে আনতে৷
মুহিন কফি হাতে ল্যাবের বারান্দায় পৌঁছা মাত্র ছেলেটা গিয়ে মুহিনকে বলল
-এই,তুকে ভাই ডাকে।
ছেলেটা যে সুরে তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, সেই একি তাচ্ছিল্যের সুরে মুহিন বলল
-তোর কোন ভাই?
-তাকিয়ে দেক।
মুহিন তাকালো।আর সাথে সাথে গরম কফির মগ হাত থেকে ছুটে ছেলেটার পায়ে গিয়ে পড়ল৷ছেলেটা ইস ইস করে পা ঝাঁকি দিয়ে মুহিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে নেই৷ এক ভোঁ দৌড়ে বারান্দার ঐ মাথায় চলে গেছে৷
সে বুঝে পেল না,তার ভাইকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে৷ সে এই সিটির মেয়র৷
ইজহার অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ও যখন মুহিনের সাক্ষাৎ পেল না তখন রাগে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। রাগ গিয়ে আরো সপ্ত আসমানে চড়ল যখন ছেলেটা এসে মুহিনের দৌড়ে পালানোর খবর দিল। ইজহার মাহমুদ তখকার মত রাগ নিয়ন্ত্রণ করে মিটিংয়ে তো চলে যায় কিন্তু সে মনে মনে মুহিনকে দ্বিতীয়বার তার সামনে চাচ্ছিল শুধু ওকে একটা উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য৷ এত বড় সাহস এই ছেলের?ইজহার মাহমুদকে অবহেলা করে।
মুহিন বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা।সুবর্ণা ওর জন্য অপেক্ষা করছিল৷ মুহিন ফিরতেই চিন্তিত মুখে মুহিনের সামনে এসে দাঁড়ালো
-মুহিন,এত দেরি করলি কেন ভাই?
-ইশাদের সাথে ছিলাম আপা।
-তোর দুলাভাই এখনো ফিরেনি৷ আমার শাশুড়ী চিন্তা করছে৷
-দুলাভাই কোথায়?
-অফিসের কাজে বুধল যাবে বলেছিল। এখনো ফোন অফ।
মুহিনকে এবার চিন্তিত মনে হচ্ছে৷ সে তার দুলাভাইয়ের অফিসে ফোন করেছে৷ তিনি নাকি বুধল থেকে আর অফিসে ফিরেনি। তার বন্ধু সমীন ভাইকে ফোন করল, সে বলল মুহিনের দুলাভাই পৌরসভা অফিসে গিয়েছেন৷
মুহিন আর দেরি করেনি। সাইকেল নিয়ে ছুটলো পৌরসভা অফিসে।
মুহিন যে মাত্র পৌরসভা অফিসে পৌঁছলো, সেই মাত্র সে দেখে তার দুলাভাই আর ইজহার মাহমুদকে পৌরসভার ক্যান্টিনে বসে চা খাচ্ছে। মুহিন এগিয়ে যাবে নাকি বাড়ি ফিরবে সেটা ভাবার আগে ই তার দুলাভাই তাকে দেখে ডাক দিল
-এই মুহিন,এই দাদন এ দিকে আয়৷
মুহিন হতভম্ব হয়ে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মুহিন তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মুহিনের দিকে ইশারা করে ওর দুলাভাই বলল
-এই যে,এটাই আমার আদরের শালা।
ইজহার মাহমুদ একবার তাকালো। সে এমন একটা ভান করল যেন মুহিন কে এর আগে দেখে ই নি৷
মুহিন ভয়ে ভয়ে সালাম দিল৷ ইজহার মাহমুদ সালামের উত্তর দেওয়ার আগে ই মুহিন ওর দুলাভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলল
-ভাইয়া,আপনার ফোন অফ কেন?আপা চিন্তা করছে৷
-আরে হ্যা,ফোনটা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গেছে৷ আচ্ছা চলো বাসায় যাই৷
তারা বাড়ির পথ ধরলো। ইজহার মাহমুদ তখনো তার ছেলে পুলে নিয়ে ক্যান্টিনে বসা। তার ভেতর ক্ষোভে জ্বলে যাচ্ছে। ভয়াবহ একটা যন্ত্রনা জ্বালিয়ে দিচ্ছে তার মন।।মুহিন একবার ফিরে তাকালো৷ ইজহার মাহমুদ রাগি চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহিনের মনে হলো,ভয়াবহ কিছু করবে ইজহার মাহমুদ৷ ভয়ে তার মন কেঁপে উঠলো।
.........(চলবে)
Hmm
ReplyDeleteচলবে না দৌড়বে। আমার অনেক ইচ্ছা আর্ভান শান আরাফ ভাইয়ার ফেসবুক ফ্রেন্ড হওয়ার আর ওনার সব গল্পঃ গুলো পড়ার😄
ReplyDeleteঅনেক অনেক শুভকমনা ভাইয়া আপনার জন্যে