গল্পঃ- অমাবস্যার চাঁদ
পর্বঃ-০৭
লেখকঃ-আরভান শান আরাফ
সকালে খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেলো৷ আমি দু'তলার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম৷ উত্তর দিকের রাস্তা দিয়ে নামাজ পড়ে মুসল্লিরা যাচ্ছে৷আমি তাদের কাউকেই চিনি না৷ গতরাতে অল্প বৃষ্টি হয়েছিল৷ গাছপালা খুব সতেজ আর প্রাণবন্ত দেখাচ্ছে৷ একজন কে দেখলাম গুন গুন স্বরে কুরান পড়তে পড়তে যাচ্ছে৷ হঠাৎ কী মনে করে যেন কুরান পড়া থামিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে এক পলকে তাকিয়ে রইলো৷ চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি সরিয়ে নিল৷ আমি গ্রামের মানুষগুলোকে খুব একটা চিনি না৷ অতীতে যাদের সাথে পরিচয় ছিল তাদের কথা ও খুব একটা মনে নেই। আমি যখন আম বাগানের দিকে তাকিয়ে নিজের অতীত আর বর্তমান নিয়ে ভাবছি ঠিক তখন মোবাইল ফোন ভেজে উঠলো।
আমি ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে নারী কন্ঠে সহজ সরল প্রশ্ন
-হ্যালো,আপনি কি ডক্টর তানিম শিকদার?
-জ্বি!আপনি কে বলছেন?
-আমাকে চিনবেন না,যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শুনুন
-কী শুনব।
-বলছি। আপনি কি আজ তুল্লাকান্দি মেয়ে দেখতে আসবেন?
-সরি! আমি ঠিক জানি না৷
ওপাশ থেকে হতভম্ব গলার স্বর
-অ আল্লা!যার বিয়া তার খবর নাই, পাড়া পড়শির ঘুম নাই৷
-কী বলবেন বলুন প্লিজ,
-শুনুন,আপনি বিয়া কইরেন না৷ আপনি যে মেয়েরে বিয়ে করবেন অই মেয়ে আমার ভাইয়ের জিএফ
-সরি! জিএফ মানে?
-অ আল্লা! জিএফ বুঝেন না? জিএফ মানে লাভার। প্রেমিকা।
-শুনুন,যা বলার আমার কাকাদের বলুন৷ আমাকে বলে লাভ নেই৷
বলে ফোন কেটে দিলাম৷ আনন্দিত হব নাকি বিরক্ত বুঝে আসছে না। পরক্ষণে মনে হলো,বিষয়টা খুব হাস্যকর৷ এটা কি নিলয়ের কাছে শেয়ার করা যায়?কোথায় আছে সে। আমার মনের আকুতি কবে বলব তাকে?
সকাল তখন নয়টা৷ আমাকে চা দিয়ে গেছে৷ চায়ে চুমুক দিতেই বিস্বাদে মুখ ভরে গেল। মনে হলো কেজি খানেক চিনি দেওয়া চায়ে। আমি তখন বই হাতে সোফাতে হেলান দিতে যাব ঠিক তখন ছোটকা ঢুকলো। আমাকে অপ্রস্তুত দেখে ছোটকা অবাক হয়ে বলল
-খোকা, রেডি হওনি কেন?দ্রুত রেডি হও৷ তুল্লাকান্দি যেতে হবে৷
আমি জানি কেন যাবে তুল্লাকান্দি, তবু প্রশ্ন করলাম
-তুল্লাকান্দি কেন?
-সে কি! তোমাকে বাউজে বলেনি কিছু?মেয়ে দেখতে যাব দ্রুত পোশাক পড়ে নাও।
আমি কিছু বলেনি৷ কাকা নিজেই আলমারি খোলে প্যান্ট শার্ট বের করে বিছানায় রেখে বলল
-দ্রুত নিচে আসো। সবাই অপেক্ষা করছে৷ বলেই তিনি ব্যস্ত হয়ে বের হয়ে গেল।
আমি তখন গাড়িতে গিয়ে বসব বলে ঘর থেকে বের হয়েছি৷ ঠিক তখন নিলয় ছুটে এলো। ওকে দেখে লজ্জায় আমার কেমন যেন লাগছিল৷ আমাকে কনে দেখতে যেতে দেখে সে 'থ' হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল আমার দিকে৷ যখন দেখল লজ্জায় আমি আর তার দিকে তাকাচ্ছি না তখন অভিমানে নাকি রাগে দৌড়ে চলে গেল।
আমরা যখন তুল্লাকান্দি গিয়ে পৌঁছলাম তখন একটা অঘটন ঘটলো। সেটা বুঝতে আমাদের ঘন্টা খানেক সময় নিয়েছিল৷যে মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছিল সে মেয়ে পার্লারে যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। ভেতরে ভেতরে আমি পুলকিত হলে ও বাহিরে এমন একটা চেহারা করে রাখলাম যেন,এই ঘটনায় আমি খুব লজ্জিত। ছোটকা,বড়কা আর নিলয়ের বড় কাকা গিয়েছিল আমাদের সাথে৷ বড়কা রাগারাগি শুরু করার আগেই সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়িতে চলে আসি৷
বাড়ি ফিরে বিকেলে নিলয়ের খোঁজে ওদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হতেই দেখি নিলয় আমাদের আমবাগানে কতগুলো কাচা আম হাতে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে একটা প্রকান্ড আমগাছের আড়ালে গিয়ে লুকালো। গাছের পাশে গিয়ে নিলয়ের নাম ধরে ডাকলাম
-নিলয়৷
নিলয় গাছের আড়াল থেকে জবাব দিল
-মেয়ে পালিয়েছে শুনলাম।
-তা তো পালাবেই৷ আমাকে তো কেউ চায় না।
-কে চায় না শুনি তো।
-তুমি চাও কিনা সেটা বলো।
নিলয় গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে এলো।ওর মিষ্টি চেহারাটা দেখে আমার মন কেঁপে উঠল৷ এই ছেলেটার মধ্যে এত মুগ্ধতা কেন৷ আমি ওর চোখে চোখ রেখে আবারো জিজ্ঞেস করলাম
-নিলয়,তুমি কি বুঝো না?
নিলয় আরেকটু কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল
-চলুন আমার সাথে।
আমি কোন প্রশ্ন করিনি৷ নিলয় এর সাথে হাঁটতে লাগলাম।
পথে নিলয় আর কোন কথা বলেনি৷ হাঁটতে হাঁটতে আমরা গেলাম গ্রামের কবরস্থানে। বিশাল কবরস্থান৷ চারদিকে শুণ্যতার ছড়াছড়ি। সূর্য শেষ আকাশে এসে হেলে পড়েছে৷ নিলয় একটা কবরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷ পুরাতন কবর। একটা বকুল ফুল গাছের তলায় কবরটা। আমি নিলয়ের দিকে তাকালাম। ওর চেহারা ভাবলেশহীন। যেন পুরাতন কোন ক্ষত ওর বুকে তাজা হয়ে উঠেছে৷ নিলয় আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলল
-এই কবরটা কার জানেন?
-কার?
-আমার গর্ভধারিণী মায়ের৷
আমি চমকে উঠার মত বললাম
-তোমার মায়ের?তাহলে কুঠবাড়িতে যার সাথে তুমি থাক তিনি কে?
-তিনি আমার বাবার বড় স্ত্রী।
আমি নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমার মনে তখন হাজার প্রশ্ন৷ বুঝে পাচ্ছি না কী বলব। নিলয় আবারো বলল
-আমার মাকে হত্যা করা হয়েছিল৷ আমার মায়ের দোষ একটা ই ছিল তিনি আমার বাবার অবৈধ সন্তানকে গর্ভে ধারন করেছিল৷ শুধু ধারন ই করেনি, তার পিতৃ পরিচয়ের জন্য লড়াই করেছিল৷আমি তো পিতৃ পরিচয় পেয়েছি ঠিক ই কিন্তু তা আমার মার বিনিময়ে৷
নিলয়ের চোখে পানি৷ আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরলাম।
ওর কান্নার শব্দ আমার বুকে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত। আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম৷ নিলয় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে পালালো।
আমি আরো কিছুক্ষণ কবরটার সামনে দাঁড়ালাম। রহস্য আর নিলয়ের কষ্টগুলো আমার পায়ে শিকল পড়িয়ে দিল। কী ঘটেছিল নিলয়ের জীবনে?কেন এত বিষাদ ছড়িয়ে আছে ওর চারদিকে৷ যে যন্ত্রনায় আমার শৈশব কেটেছে, সেই একি যন্ত্রনায় কাতরাতে আমি আমার নিলয়কে দিব না।
কিন্তু কার কাছে জিজ্ঞেস করব। কে বলবে আমাকে কী ঘটেছিল তখন৷ ছোটকা বলবে না৷ কাকী কিছু জানে বলে মনে হয় না৷ হঠাৎ করে জমির উদ্দীনের কথা মনে হল।সে এই গ্রামের ই৷ নিলয়কে খুব ভাল করে চিনে৷ ওদের পরিবার সম্পর্কে ও জানে৷ ওনাকে জিজ্ঞেস করা যেতে পারে।
পরের দিন সকালে আর কাউকে কিছু বলিনি৷ ব্যাগ গুছিয়ে সোজা বাসায়। ড্রাইভিং করা অবস্থায় ছোটকা কল করেছিল৷ কিন্তু ধরিনি৷ নিলয়কে ও কিছু বলে আসিনি৷
আমাকে দেখে জমির উদ্দিন কাকা খুব খুশি হলো। দরজা খোলে আমাকে দেখে এক গাল হেসে বলল
-অল্লাহ! ডাক্তার বাজান৷ চলে আয়ছেন৷ আয়েন আয়েন৷ আমি অহন ই পাক বসায় গিয়ে৷
-রান্না পরে৷ আগে আপনার সাথে কিছু কথা আছে৷ আমার রুমে আসুন।
-কী কথা বাজান৷ গাওয়ে কি কিছু হয়ছে?
-না, কিছু হয়নি৷ ঘাবড়াবেন না৷
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে জমিরউদ্দীন কাকা রুমে আসল৷ আমি বললাম
-চেয়ারটা,টেনে সামনে বসুন৷
তিনি বসলেন।
-আচ্ছা,নিলয়কে তো চিনেন ই।
-হ্যা,চিনুম না কেন৷ চিনি ই তো।
-নিলয়ের মাকে?কী হয়েছিল ওনার সাথে?
-এসব পুরান কথা কেন বাজান?
-আমার জানা দরকার।
-নিলয় বাজির মা যখন আমাদের গেরামের ইশকুলে মাস্টারি করতে আয়ল তখন গেরামের সবাই দেখে অবাক৷ রূপেরে রূপে খা,গুণেরে গুণে৷ যেমন রূপ,তেমন ব্যবহার। গেরামের ইশকুলের বাচ্চারা খুশি আপার প্রশংসায় কাতর। নিলয়ের বাবা তখন গেরামে ত্রাসের কারন। আজ একে মারে ও তো কাল ওকে মারে৷ হিন্দু পাড়ায় আগুন দিয়ে তাদের স্বর্বস্ব জ্বালিয়ে ছাই করে দেওয়ার প্রতিবাদ করেছিল নিলয়ের মা৷ সেখান থেকেই নিলয়ের বাবা মার পরিচয়।চেনা জানা হয়৷ নিলয়ের মায়ের শান্ত স্বভাবের কাছে নিলয়ের বাবার পরাজয় হয়৷ মাইনষে কত কথা কয়লো৷ নিলয়ের বাপ নিলয়ের মায়ের সাথে কখন কী হয়েছিল তা কেউ বলতে পারে না৷একদিন হুট করেই খুশি আপা ইশকুল বদলি করে অন্য জায়গায় চলে গেলো। তার আর কোন খোঁজ পায়নি কেউ৷ ফিরলো প্রায় বছর খানেক পরে৷ সেদিন নিলয়েয় বাপ সালামের বিয়ের বৌভাত৷ নিলয়ের দাদা তখন জীবিত৷ খুশি আপা সাথে করে পুলিশ নিয়ে এসেছিল৷ আশাপাশের গেরামের সকাল পরিবারের লোক এসেছিল এই বৌভাতে। খন্দকার বাড়ির ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা৷ সেই বৌভাতে পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় নিলয়ের বাবাকে৷ খুশি আপার অভিযোগ, কুলের বাচ্চাটা নিলয়ের বাবার। বছর খানেক আগে নিলয়ের সালাম খন্দকার তাকে ধর্ষণ করেছিল। তখন তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল৷ প্রাণের ভয়ে সে গ্রাম ত্যাগ করেছিল ঠিক ই৷ কিন্তু এখন তার সন্তানের পিতৃ পরিচয় প্রয়োজন৷
সেদিন নিলয়ের দাদা আর বড় কাকা সম্মানের সাথে বংশের মান রক্ষার জন্য খুশি আপাকে ঘরে তুলে নিয়েছিল৷ নিলয়ের দাদার অনুরোধ রাখতে সব অভিযোগ ও তুলে নিয়েছিল৷ কিন্তু খন্দকার বাড়িতে শুধু নিলয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাজের বেটির মত জীবন যাপন করতে হয়েছিল তাকে৷ খন্দকার বাড়ির একমাত্র বাচ্চা হিসেবে নিলয় হয়ে উঠল সবার চোখের মণি৷ শুধু সালাম খব্দকার ছিল ভিন্ন৷ তার মনে যে কী রাগ পুষে রেখেছিল তা কেবল সে ই জানতো৷
নিলয়ের তখন দুই তিন বছর হবে,একদিন রাতে নিলয়ের কান্নার শব্দ শুনে নিলয়ের দাদা দেখে নিলয়ের মায়ের ঘরে কিসের যেন শব্দ৷ সে হাতের পাত্রটা মাটিতে রেখে দৌড়ে গিয়ে দেখে তার পুত্র সালাম নিলয়ের বুকে ছুরি মেরে খাটে ফেলে দৌড়ে পালাচ্ছে। পাশে নিলয়ের মার গলা কাটা মৃত দেহ প্রাণ ত্যাগের জন্য কাতরাচ্ছে। আমি সেদিন সে রাতে ঐ বাড়িতেই ছিলাম।
সে রাতে নিলয়ের প্রাণ তো বেঁচে যায় কিন্তু নিলয়ের মা বাঁচেনি৷ খন্দকার বাড়ির লোকেরা নিজেদের মান আর পুত্রের মোহে অন্ধ হয়ে এত বড় ঘটনা ধামা চাপা দিয়ে দেয়৷
নিলয়ের দাদা সেবার রাগে তার সকল সম্পত্তির তিনভাগের দু'ভাগ নিলয়ের নামে করে দেন৷ নিলয়কে সন্তানের মত বুকে রেখে সালামের বড় বউ আর নিলয়ের কাকীমা বড় করেন।গেরামের লোকেরা সেই ঘটনা ভুলেনি। কিন্তু বলার সাহস কারো নেই।
জমির কাকার কন্ঠভারী হয়ে এলো৷ তার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে৷ আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি৷ আহা! আমার নিলয়ের জন্য কেউ কাঁদছে৷
জমির কাকা নিজেকে সামলে নিয়ে আবার বলতে লাগলো
-নিলয় বাজি এক্কেবারে তার মার মত হয়ছে৷ মাটির মানুষ৷ সালাম একটা জানোয়ার। সম্পত্তি হারানোর ক্ষোভে নিলয়ের উপর যে অত্যাচার করে তা বর্ণনা যোগ্য নয়৷ ছেলেটাকে কবেই মেরে ফেলত। পারে না নিলয়ের বড় কাকা-কাকীর জন্য।
নিলয়ের হার্টের ছিদ্র,দু'দিন পর পর সালাম মিয়া কেন তাকে মারধর করে তা বুঝতে পারলাম৷ আমার মন অস্থির হয়ে উঠল। যে মানুষটাকে আমি এত ভালোবাসি, যার জন্য আমার মনে এত আকুলতা সে এত যন্ত্রনায় কেন থাকবে?এই বয়সে আমার নিলয়ের হেসে খেলে বেড়ানো উচিত। তার পৃথিবী হবে স্বপ্নময়,আনন্দের৷ তাকে এত বিষাদ যাপন কেন করতে হবে৷
সারাদিন চেম্বারে মন টিকেনি। ইমার্জেন্সিতে যাওয়ার কথা ছিল৷ অসুস্থ্যতার কথা বলে ডঃমাহমুদাকে দিয়ে বাসায় চলে এসেছি৷ এসেই নিলয় ফিরেছে কিনা দেখার জন্য জমির কাকাকে পাঠালাম৷ তাকে গ্রামে যাওয়া ফেরাতে হবে৷ গ্রাম এখন হিংস্র মানুষে ভরে গেছে৷ আগের সেই সরলতা গ্রামে নেই। সবচেয়ে ভালো হয় ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে গেলে৷ যেখানে আমি আর নিলয়৷ আমার ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় ওকে মাখিয়ে রাখব৷ কিন্তু এসব শুধুই আমার ভাবনা৷ নিলয় একটা ছেলে৷ আমি ওকে যেভাবে চাচ্ছি সে যদি সেভাবে আমাকে না চায়?আমার এত প্রেম যদি তার দৃষ্টিতে শুধু স্নেহ হিসেবেই গণ্য হয়৷
নিলয় বাসায় ফিরেনি৷ আমার মন আরো অধিক বিষণ্ণ হয়ে গেল৷ বই আর কফি হাতে সোফায় বসেছিলাম ঠিক সেই সময় আমার মনে চিনচিন করে একটা সুখের অনুভূতি এলো৷ আমি কফি মগটা রেখে নিচে নামতেই নিলয় আমার ঘরে আলো হয়ে ঢুকলো। আমি সাত পাঁচ না ভেবে ওকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম৷ আমার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেলো কয়েক গুণ৷ ইচ্ছে করছিল,এই ছোট, মিষ্টি লাজুক ছেলেটাকে আমার বুকের সাথে মিশিয়ে রাখি৷ নিলয় প্রাণ খোলে হেসে বলল
-আহা! ছাড়েন তো। চ্যাপ্টে ফেলবেন নাকি?
আমি ওর কপালে চুমু খেয়ে হাত ধরে টেনে সোজা দু'তলায় নিয়ে গেলাম৷ আমার রুমে নিয়ে ওকে বসিয়ে বললাম
-চলো আমরা দূরে কোথাও চলে যায়৷ তোমাকে এই আজাবে থাকতে হবে না।
-আপনার সাথে?
-হ্যা,আমি আর তুমি।
নিলয় মুখ অন্ধকার করে বলল
-এটা কি আদৌ সম্ভব ডক্টরসাব?আমার আর আপনার কী সম্পর্ক? আপনি কেন আমাকে নিয়ে দূরে চলে যাবেন?আমাকে নিয়ে এত ভাবনা কেন?
আমি আবারো ওর কপালে চুমু খেয়ে বললাম
-তুমি বুঝো না৷
নিলয় চুপ করে থাকলো কিছুক্ষণ তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমার বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছে নেই ডক্টর সাব৷ আমার জীবনে যা ছিল সব ছাই হয়ে গেছে৷ আমি ছাই হওয়া বাকি৷
নিলয়ের এই কথাটা আমার হৃদয়ে তীব্র বেগে ছুটে আসা বুলেটের মত বিধলো৷ এত হতাশা নিয়ে নিলয় টিকে থাকবে কীভাবে? নিলয় চলে গেলো। আমি স্থির পাথরের মত হয়ে গেলাম৷। আমি কী করে নিলয়কে এই যন্ত্রনা থেকে বের করে আমার জীবনে জড়াব?একটা শীতল ভয় আর চাপা কষ্ট আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল অল্প সময়ের মধ্যে৷
রাত তিনটা৷ সারা শহর নিরব৷ আমি জেগে আছি৷ আমার একটু ও ঘুম আসেনি। রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়েছে৷ মোবাইলটা হাতে নিতেই নিলয়ের ম্যাসেজ।
-ঘুমিয়েছেন?
আমি রিপ্লে করলাম
-নাহ৷ ঘুম আসে না৷ তুমি ঘুমাচ্ছ?
সাথে সাথে নিলয়ের উত্তর নাহ৷ ঘুমায়নি৷ কাল ফ্রী আছেন?
-কখন?
-রাতে।আপনাকে নিয়ে এক জায়গায় যাব।
-কোথায়?
-জাহান্নামে।
-তোমার সাথে আমি যেখানে বলো সেখানেই যেতে রাজি৷
-তাহলে এবার ঘুমান৷
-তুমি আসো৷ আবার বুকে মাথা রেখে ঘুমাও।
নিলয় আর রিপ্লে করেনি।আমি কাল রাত্রের কথা ভেবে ভেবে ঘুমাতে গেলাম৷
.......চলবে........
Vhaiya apni minimal kotodin por acta porbo upload den? Janale valo hoto. R Ami ajke prothom porsi Tai kisu Janina
ReplyDeleteঅবশেষে পেলাম আপডেট! ধন্যবাদ লেখককে! নেক্সট পার্ট টা প্লিজ ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে দিয়েন!
ReplyDelete#request_from_one_of_your_huge_fan