গল্পঃ- অমাবস্যার চাঁদ -৫
লেখকঃ- আরভান শান আরাফ
কৈশরে একবার যৌনতার আনন্দ পেয়েছিলাম। সে এক অদ্ভুত সুখ। তারপর জীবনের এই দীর্ঘ সময়ে ঐভাবে কিছু ই হয়নি। মেডিক্যালের লাস্ট ইয়ার তূর্ণা নামক এক মেয়ের সাথে চুমু বিনিময় হয়েছিল। সেটা ও খুব আবেগ বশত যে তা নয়। তারপর আর কারো সাথেই কিছু হয়ে উঠেনি।
আজ বৃষ্টি মুখর সন্ধ্যায়, কামনায় কামুক হয়ে নিলয়ের স্পর্শে যে অনুভূতি হয়েছিল তা বর্ণনা করার মত না।
শেষ রাতে ও ঘুম আসেনি৷ বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে করতে হঠাৎ দরজায় শব্দ শুনে বারান্নায় এসে দাঁড়িয়ে দেখি ছাতা মাথায় বড় কাকা দাঁড়ানো।এত ভোরে ওনি কেন আসবেন?কী কারন? আমি তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে গিয়ে কাকাকে কদমমুছি করে ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করে ভেতরে আনলাম।
মূলত কাকা গিয়েছিল সিলেট। আমার বাসা থেকে স্টেশন কাছে৷ তাই বৃষ্টির মধ্যে গগনপুর না গিয়ে এখানে উঠেছিল।ভোর হওয়ার পর নাস্তা না করে ই আবার ছুটল। কত করে বললাম একটা দিন থেকে যেতে। থাকলো না৷ শত বাহানা। যাওয়ার সময় একটা কথা ই বলে গেল বারবার, মেয়ে দেখে দ্রুত বিয়ে দিবে আমাকে।
চেম্বারে মন টিকেনি৷ দু চারটা রিপোর্ট দেখে চলে এসেছি৷মাথাটা ভারী হয়ে আছে।
দুপুরের দিকে আমি চোখ বন্ধ করে মাথায় হাত দিয়ে শোয়ে ছিলাম। চোখ বন্ধ অবস্থায় আমার মনে হলো, নিলয় এসেছে। আমি চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করছিলাম৷ তার নিশ্বাসের শব্দ আর শরীরের পারফিউম এর ঘ্রাণ আমার বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিল। সে আমার খুব কাছে এসে কী যেন ভাবলো, তারপর আমার চলে যাচ্ছিল। আমি লাফ দিয়ে উঠে ওর হাত টেনে ধরলাম।
নিলয় বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-একি! আমি ভাবলাম আপনি ঘুমিয়ে৷
-না,ঘুমাই নি। তুমি এমন চুপি চুপি এসে চলে যাচ্ছিলে কেন, শুনি?
আমি নিলয়ের হাত ছেড়ে ওর দিকে তাকালাম। ছেলেটা লজ্জায় অন্য দিকে মুখ সরিয়ে আছে। আমি নিজের দিকে তাকাল। খালি শরীর।
ও এ ব্যাপার। আমার খালি শরীর ওর লজ্জার কারন। আমি আবার ওর হাত ধরে টেনে বিছানায় আমার পাশে বসালাম। নিলয় এবার তাকালো আমার দিকে। এবার আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম। লজ্জায় ওর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। নিলয় আরেকটু ঘেঁষে আমার পাশে বসল।ওর স্বচ্ছ এক জোড়া চোখ,গোলাপী ঠোট,সদ্য গজানো দাড়ি গোঁফ, ছিমছাম শরীর আমার হৃদয় নিংড়ে প্রেম রসে ডুবিয়ে দিচ্ছিল।
আমি আর কিছু ভাবার সুযোগ পায়নি৷ ওকে টেনে ওর কপালে চুমু খাই৷ আমার চুমুতে নিলয়ে কেঁপে উঠল৷ দ্বিতীয়বার চুমু দেওয়ার আগে, আবারো ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে যায়। নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গের মত আমার কামুক হৃদয় ভেঙ্গে গেল।
ঐদিন আর নিলয়ের দেখা পাইনি৷ আমার মন অস্থির হয়ে ছিল৷ আমি কয়েকবার ছাদে গেলাম,বারান্দায় গিয়ে বসে ছিলাম কিন্তু ওর দেখা পায়নি।
রাতে কিছু খেতে ইচ্ছে করেনি।সোফায় বসে কফি খেতে খেতে পুরানো ম্যাগাজিন পড়ছিলাম। ঠিক সেই সময় নিলয় ঢুকলো। হাতে একটা বই।
সে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বইটা দেখিয়ে বলল
-রসায়ন বুঝাতে পারেন?
আমি মুচকি হেসে বললাম
-রসায়ন বুঝাতে পারিন৷ কথা হলো, বুঝানোর বিনিময় কী হবে?
নিলয় বইটা রেখে আমার পাশে বসে বলল
-আজকে ট্রায়াল। যদি দেখি ভালো বুঝাতে পারেন তবে না হয় সম্মানি দিলাম।
-আচ্ছা,দেখি তো কী বুঝাতে হবে?
নিলয় জৈব রসায়নের একটা পার্ট দেখিয়ে বলল
-বিক্রিয়াগুলো বুঝিয়ে দেন।
সেদিন অনেক লম্বা সময় নিয়ে আমি নিলয়কে জৈব রসায়ন বুঝালাম।
আনন্দে আত্মহারা হয়ে নিলয় বলে উঠলো
- বাহ! ডাক্তার সাব আপনি তো রসায়ন খুব ভাল পড়ান।
-তাই নাকি?
-তাইতো দেখছি।
-তাহলে আমাকে বিনিময় দেওয়া যাবে?
নিলয় উত্তর না দিয়ে আমার দিকে অপলকে তাকিয়ে রইল খানিক। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার গালে চুমু দিয়ে বই রেখে ই দৌড়ে পালালো।
ওর চুম্মনের মাধুর্যে আমার সারা শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল৷ আনন্দ,ভালালাগা আর ভিন্ন এক অনুভূতিতে হৃদয় আচ্ছন্ন হয়ে ছিল অনেকক্ষণ। তারপর যখন হুঁশ এলো, তখন আবারো ওকে কাছে পাওয়ার জন্য মন ছটফটাতে লাগলো।
আজো রাত্রে ঘুম হয়নি। সারা রাত্রি ছটফট করে শেষ রাত্রের দিকে ঘুম হয়েছে। ঘুম ভাঙলো মুস্তাকের ইমার্জেন্সি ফোন কলে।তাড়াহুড়ো করে হসপিটাল যেতে সকালে আর খাওয়া হয়নি।
দুপুর হতে না হতে খিদায় মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যাবার উপক্রম। বাহির থেকে কিছু এনে খাওয়া যায় কিন্তু সেগুলো যতেষ্ট স্বাস্থকর নয়।
কী করব সেটা ভাবতে ভাবতে মধ্য দুপুরে নিলয় এলো৷ ওর হাতে টিফিন বক্স৷ ওকে দেখে পেটের আর মনের উভয় খিদা বেড়ে গেল।
-কী এনেছ?
-খাবার৷ শুনলাম সকালে না খেয়ে এসেছেন।
-কী খাবার আনলে?
-হাত মুখ ধুয়ে আসুন।দেখতে পাবেন।
-কে দিল?
-আম্মু।
আমি বাধ্য ছেলের মত শার্ট এর হাতা গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুছে চেয়ারে বসলাম।নিলয় একটা প্লেটে খাবার সাজাতে সাজাতে বলল
-বিয়ে করেন না কেন ডাক্তার সাব? তাহলে আর খালি পেটে হসপিটাল আসা লাগবে না।
আমি মুচকি হেসে বললাম
-কেন,আমার জন্য তোমার কি খুব চিন্তা?
-চিন্তা নাহ। কেমন যেন লাগে৷ বুকে কেমন যেন করে।
আমি চেয়ার থেকে উঠে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম
-বুকে কেমন করে? দেখি তো।
নিলয় লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। আমি টি-শার্টের উপর দিয়ে ওর বুকে হাত রাখতাম। মনে হচ্ছিল বুকে কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে।নিলয় ওর একটা হাত আমার হাতে রাখল। আমি কেঁপে উঠলাম।
-ডাক্তার সাব, আমি চলে যাচ্ছি। আপনি খেয়ে নেন।
নিলয় উঠে দাঁড়ালো। আমি শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার সারা জীবনের ক্লান্তি এক নিমিষে বিলিন হয়ে গেল। নিলয় কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। সে ছুটার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কতক্ষণ এভাবে জড়িয়ে ছিলাম খেয়াল নেই। মোস্তাকের বেলের শব্দ শুনার পর যখন ওকে ছাড়লাম তখন এক দৌড়ে পালালো।
নিলয়!আমার নিলয়! সে যদি বুঝতো আমি তাকে কতটা ভালোবাসি।
এর পরের দু'দিন নিলয়ের দেখা পাইনি৷ জমিরউদ্দীনকে দিয়ে খবর ও পাঠিয়েছি কিন্তু সে আসেনি।আমার মন অস্থির হয়ে উঠল৷ ঐ দিনের ঘটনায় নিলয় কিছু মনে করেনি তো? নিলয় যদি আর কোন দিন না আসে? দুঃচিন্তায় দু দিন ঘুম হয়নি৷ খাবার টেবিলে বসে খেতে পারিনি৷ চেম্বারে মন বসেনি৷ একা একা লাগতো। মনে হত আমার কেউ নেই। আমি খুব একা। নিলয়ের স্পর্শ, ওর আবেগী কন্ঠস্বর৷ প্রেমময় স্পর্শ খুব মিস করতাম।
দু'দিন পর সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে গোসল করে সোফায় বসে মোবাইলটা হাতে নিয়েছিলাম ছোটকাকে ফোন দিতে, ঠিক সেই সময় জমিরুদ্দিন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল
-গেরামে কাইজ্জা হয়ছে৷ বহুত বড় কাইজ্জা।
-কোন গেরামে?
-গগনপুর আর অষ্টলা দুই গ্রামের মধ্যে।
-তুমি জানলে কোথা থেকে?
-নিলয় বাজি বলল।
-সে কি গগনপুর ছিল নাকি?
-জে। কাইজ্জা কিন্তু থামেনি।আজ রাইতে ও কাইজ্জা হয়ত পারে। নিলয় বাজি তো শক্ত ব্যথা পাইল।
আমার বুক ধক করে উঠল। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম
-নিলয় কোথায়?
-বাসায়। মাথায় ব্যান্ডেজ করে আয়ছে।
আমি আর এক মিনিট ও দেরি না করে, ওর কাছে ছুটলাম। ওকে না দেখা পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।
নিলয় বিছানায় শুয়ে শুয়ে কার্টুন দেখে হাসছিল। ওর হাসিতে যেন সারা ঘর আলোকিত হয়ে আছে।আমাকে ঢুকতে দেখেই জিভে কামড় দিয়ে টি-শার্ট খোঁজতে লাগলো। আমি খেয়াল করে দেখছিলাম নিলয়ের খালি শরীর৷ বুকের হালকা পশম,সড়ু কোমড়,গভীর নাভী,আর কোমল শরীর।
নিলয় টি-শার্ট না পেয়ে তোয়ালে দিয়ে শরীর ঢেকে আমার থেকে একটু দূরে বসল।
আমি ওর হাত ধরে টেনে আমার কাছে টেনে এনে বললাম
-কে তোমার মাথায় আঘাত করেছে?
-কেউ না তো৷
-গ্রামে ঝগড়া হয়েছে নাকি?সেখান থেকে ব্যথা পেয়েছ?
-গ্রামে ঝগড়া হয়েছে কিন্তু ব্যথা সেখান থেকে পাইনি৷ বিষয়টা বাদ দিয়ে দেন৷
-দু'দিন কোথায় ছিলে?
-কাকীমার শরীর খারাপ ছিল। গ্রামে গিয়েছিলাম।
-আমাকে বলে যাওনি কেন?
-বলে গেলে কী হত, যেতেন?
আমি অশ্রুস্নিগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-হ্যা, যেতাম৷ গ্রামটা তো আমার ও।
নিলয় এতক্ষণ পর আমার দিকে তাকাল।ওর চোখ জুড়ে অপার বিস্ময়৷ হয়ত ভাবছে, এই ভদ্রলোক আমার জন্য কেন অশ্রুসিক্ত? হয়ত ভাবছে এই ভদ্রলোকের আমার জন্য কেন এত মায়া?
ও যদি জানতো, ওর জন্য আমার মনে কত ভালবাসা, কত মায়া।
নিলয় আমরা হাত ধরে ওর বুকের মাঝে চেপে ধরে বলল
-আপনি কাছে আসলে আমার বুক এমন করে কেন?দেখেছেন কেমন ধুকপুক করছে?
আমি চোখ বন্ধ করে ওর হৃদয়ের স্পন্দনে স্পন্দিত হচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময় আন্টি এসে ঢুকলো রুমে৷ সাথে ওদের কাজের খালা৷ হাতে রাজ্যের খাবার দাবার৷। আমি হকচকিয়ে উঠে দাঁডিতে গেলাম। আন্টি এক গাল হেসে বলল
-বসো বাবা, বসো।
-কেমন আছেন?
-ভাল আছি৷ কিন্তু তোমার রোগী আর ভাল থাকতে দিচ্ছে কোথায়?
-কেন আন্টি?
-ওকে ই জিজ্ঞেস করো
আমি নিলয়ের দিকে তাকালাম। ও চোখ সরিয়ে নিল।
সেদিন আর বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছিলো না৷ ওর কাছে বসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছিল। মনকে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে যখন রুমে ঢুকলাম তখন যেন ছটফটানিটা আরো বহু গুণে বেড়ে গেল।
সেদিন রাতে বারান্দায় বসে বসে কী যেন কী ভাবছিলাম, ঠিক সেই সময় ছোটকার ফোন।আমি ফোনটা কানে দিতে না দিতে ই ওপাশ থেকে কাকা বলতে শুরু করল
-শুন খোকা,কালকে তোর গ্রামে আসা লাগবে। বড়দার শরীর খারাপ।
-কী হয়েছে বড়কার?
-সকাল সকাল চলে আসবি৷ দেরি করিস না। আসলে ই বুঝবি।
ফোন রেখে দিল। আমাকে কিছু বলার সুযোগ ই দেয়নি৷
বিছানায় গিয়ে চোখটা বন্ধ করলাম।নিলয়ের মিষ্টি হাসিটা ভেসে উঠল। মনে মনে বিড়বিড় করলাম।
নিলয়! আমার নিলয়! আমি তারে অনেক ভালোবাসি।
বিঃদ্রঃ-ভাল লাগলে দয়া করে শেয়ার ও কমেন্ট করে পাশে থাকবেন৷ আপনাদের কমেন্ট আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
অনেকদিন পর লেখকের গল্প পড়তে এলাম।
ReplyDeleteপ্লিজ নেক্সট পার্ট পোস্ট করুন।
ReplyDeleteপ্লিজ তাড়াতাড়ি আগামী পর্ব দিন
ReplyDeleteপ্লিজ ভাই নেক্সট পার্ট টা রিলিজ করেন!
ReplyDelete