Onlyfan Premium Videos

শূণ্যস্থান-৬ (অন্তিম পর্ব)


 গল্পঃ-শুণ্যস্থান-৬ (অন্তিম পর্ব)

আরভান শান আরাফ


বিশাল বাড়ি। এত বড় বাড়িতে সুমন আর দুজন কাজের লোক ছাড়া আর কেউ নেই৷ মিতুর সাথে সুমনের ছাড়াছাড়ি এখনো হয়নি তবে মিতু সুমনের বাড়ি ছেড়েছে।শেষবার সুমন একবার ভেবিছিল মিতুকে থেকে যেতে বলবে কিন্তু যে সম্পর্কে কোন আবেগ নেই তা চালিয়ে নেওয়ার শক্তি সুমনের আর নেই। সমাজ আর সামাজিকতার দোহায় দিয়ে দীর্ঘ এতগুলো দিন সে সংসার নামক খেলায় মগ্ন ছিল।কিছু দিনের মধ্যে ই সে সম্পর্কের ইতি ঘটবে।

ডিভোর্সের কথাটা সুমন নিজে বলেনি। মুকন্দপুর থেকে ফেরার পরে মিতু আর সুমনের বাড়ি উঠেনি। এর কিছু দিন বাদে মিতুর ডিভোর্সের আইনি নোটিশ গেল সুমনের অফিসে। শুরুর দু'একটা দিন  সুমন কেবল ভেবেছে৷ কী করা উচিত৷ 

নিবিড় তার জীবনে ফিরবে না সে জানে। মিতুকে ও সে আর কাছে টানতে পারবে না। এই টানাপোড়েনে সবচেয়ে অধিক কষ্ট মিতু ই পাচ্ছে৷ এই কষ্ট থেকে মুক্তির এই একটা পথ ই খোলা আছে। 

মুকন্দপুর চর ভাঙতে শুরু করেছে৷ চল্লিশ বছর আগে জেগে উঠা চর অতি অল্পসময়ে ই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷ শুরুর দিকে কৃষি জমিগুলো নদীতে ভেঙ্গে পড়ছিল মাস খানেক হলো, ইদানীং বসতভিটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।মুকন্দপুর গ্রামের মানুষ প্রায় অসহায়৷ যাদের বাড়ি নদীর জলে তলিয়ে যাচ্ছে তাদের উজানের দিকে সাময়িক ঘর তৈরি করে থাকছে৷ কিন্তু এভাবে কতদিন? 

গোসাইপুরের পুর্বদিকে নতুন চর জাগতে শুরু করেছে। নিবিড় রাত দিন এক করে ছুটাছুটি করছে নতুন চরে যেন তারা জমি পায় যারা ভাঙ্গনের শিকার। 

এই কঠিন সময়ে মুকন্দপুরের পাশে নিবিড় যে ভাবে দাঁড়িয়েছে তা আর কেউ কখনো করেনি। কিন্তু,কেমন আছে নিবিড়? সব হারিয়ে নিঃস্ব নিবিড় কি আদৌ সুখে আছে?


ঘড়িতে রাত তিনটা৷ ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে সুমনের ঘুম ভাঙ্গলো৷ অথচ রুমে এসি চলছে। সুমন উঠে পানি খেলো৷আজ অনেক দিন পর সে স্বপ্ন দেখলো। সেই ভয়ানক দুঃস্বপ্ন৷ একটা নৌকায় সুমন আর নিবিড় কোথায় যেন যাচ্ছে। চারদিকে খুব অন্ধকার। সুমন ঘাবড়ে নিবিড়ের হাত ধরে আছে৷ নিবিড় সুমনকে কী যেন বলছে কিন্তু সুমন নিবিড়ের ঠোঁট নাড়া ছাড়া কিছু বুঝতে পারছে না। নদীর দু'পাশে অসংখ্য শেয়াল ডাকছে। স্বপ্নে সুমন যখন নিবিড়কে ধরতে যাবে, নিবিড় তখন নদীতে ঝাঁপ মারে। সুমন নিবিড়ের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ঘুম থেকে জেগে উঠে। 


বেলা যত বাড়ছে, মেঘনা তত ভয়াবহ হচ্ছে। মুকন্দপুরে আর মাত্র চারটা ঘর বাকি আছে৷ নিবিড়ের দৌড়াদৌড়ি ফলপ্রসু হয়েছে। নতুন জাগা চরে মুকন্দপুরের ভূমিহীন লোকদের জায়গা হয়েছে। সরকার থেকে তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।গোসাইপুরের ইউএন সাব জনাব ফজলু হক নিবিড়ের আন্তরিকতায় মুগ্ধ। এতটাই মুগ্ধ যে, নতুন চরে নিবিড়কে মুকন্দপুরের মত ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে৷। নিবিড় কিছুটা আশ্বস্ত হলো। নতুন চরে তাদের জায়গা না হলে এতগুলো মানুষ ভেসে যেত।এসব কিছুর পেছনে মইন সাহেবের অবদান ও কম নয়। নিবিড়ের পাশাপাশি সে ও অনেক করেছে। 

সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করে যখন ঘরে ফিরে তখন তার ভেতর হু হু করে কেঁদে উঠে৷ তার সারা শরীর জুড়ে সুমনের স্পর্শ অনুভব করে। সুমনের চুম্মনের শব্দ তার কানে বাজে৷ সুমনের আবেগ তাকে দাঁড়িয়ে বেড়ায়৷ আর একবার সে শুধু সুমনকে দেখতে চায়। তার এই শূণ্য ঘরে সে একা, অসহায়ের মত বেঁচে থাকে।তার মনে পড়ে সুমনের কথা। এক বর্ষায় সুমন যখন নিবিড়কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল

-তোমার শরীরের ঘ্রাণ আমার শরীরে সারা জীবনের জন্য মাখা আছে। আমি সেই ঘ্রাণ কখনো ভুলব না। 

নিবিড় বিস্ময়ে চোখ তুলে বলত

-আমরা তো সারা জীবন এক সাথে ই থাকব। আমার ঘ্রাণ ভুলতে হবে না।

আজ এতগুলো বছর পরে ও নিবিড় সে কথা ভুলতে পারছে না। যন্ত্রনায় তার হৃদয় কাতরে উঠে৷ কিন্তু বলার মত কেউ নেই। 


মিতুর সাথে সুমনের ডিভোর্স হবে আজ। দুজন আইনজীবীর সামনে ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করার পর তারা চির দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কলেজ জীবনের যে বন্ধুত্ব তাদের স্বামী-স্ত্রী নাম দিয়েছিল আজ তার সমাপ্তি হবে। মিতু হয়তো অন্য কাউকে নিয়ে নিজের জীবনের পুনর্গঠন করবে কিন্তু সুমন আর কোন দিন অন্য কারো কথা ভাবতে পারবে না।জীবন তাকে দিয়েছে কেবল একাকিত্ব আর শূণ্যতা। এই শূণ্যতা পূর্ণ করার ক্ষমতা যে মানুষটার সেই মানুষটাকে ও সে হারিয়ে ফেলেছে৷ 

এদিকটা গুছানো হয়ে গেলে সুমন পাড়ি জমাবে অহনার কাছে৷ অহনা বর্তমানে জাবেরকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায়৷ সুমনের ও ইচ্ছে বাকি জীবনটা অহনা,আর জাবেরের সাথে কাটাবে৷ এই পোড়া দেশে তার মন টিকছে না। জীবনের এই যে শুণ্যস্থান কখনো পূরণ হবে না তার অপেক্ষায় কতকাল আর কাটাবে? এরচেয়ে দূরত্ব ই কি শ্রেয় নয়? 


আগামীকাল মইনুদ্দিনের বিয়ের কথা পাকাপাকি হবে। অনেক জোড়াজুড়ি করার পর রাজি হয়েছে৷ উজানের মেয়ে। ইউএন ফজলু সাহেবের মেয়ে।মইন তার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে কিছু বলে নি৷ তবে মইনের মায়ের মেয়ে খুব পছন্দ৷ ঐদিন মইনের মা নিবিড়কে টেনে নিয়ে নিজের বিছানায় বসে মাথায় হাত দিয়ে যখন বলছিল

-বাজান,আমার মইনে কারো কথা শুনে না৷ তুমি যা বলো তাই শুনবে৷ তোমারে অনেক মানে। তুমি তারে বুঝায়া সুঝায়া রাজি করাও। আমারে নিরাশ কয়রো না বাপধন৷

নিবিড় মইনের মায়ের কোমল আদরে গলে গিয়ে আশ্বস্ত করেছিল যে সে রাজি করাবে৷ কিন্তু বের হতেই তার অন্তর আত্মা কাঁপতে লাগল। মইনকে সে কী করে রাজি করাবে?যদি সে না মানে?

সন্ধ্যায় মইনুদ্দিন তার লোকজন নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। নিবিড় তখন নতুন চড়ে যাচ্ছিল। মুকুন্দপুর এখন মেঘনার জলে বিলীন। নতুন চড়কে কেউ নিবিড় চড়, কেউ নয়া চড় কেউ মুকন্দচড় বলে ডাকে।খুব দ্রুত নতুন চড়ে সবাই খাপ খেয়ে গিছে৷ টুকটাক সবজির চারা, দু একটা সুপারি, নারিকেল গাছ মাথা উচু করে দাঁড়িয়েছে৷ ছোট একটা প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটা মসজিদ,একটা ব্রাক স্কুল নিয়ে নতুন চড়ের মানুষগুলো পুরানো দুঃখ ভুলার চেষ্টা করছে৷ চড়ে বিদ্যুৎ আসেনি। খুব দ্রুত আসবে বলে মনে ও হচ্ছে না। 

সেদিন চড়ে যাওয়ার পথে মইনকে নিবিড় আমতা আমতা করে ই বলেছিল

-তা,বিয়ে খাওয়ার শখটা কি পূরণ করার ইচ্ছে হয় না? 

মইন প্রথমে কথাটা বুঝতে পারেনি৷ চার পাঁচ কদম হাঁটার পর বুঝলো নিবিড় কি বলতে চাচ্ছে? সে মুখ রহস্যের একটা হাসি টেনে বলল

-বিয়ে কি করতে ই হবে?এভাবে জীবন চলে না?

-জীবন হয়তো চলে। তবে একা একা আর কতটুকুই চলে?

-তুমি ও তো একা। তোমার তো বেশ চলে যাচ্ছে। 

-চলে যাচ্ছে? সেটা কেবল আমি ই জানি। 

মইন নিবিড়ের দিকে তাকালো। তার চোখে বিষণ্ণতার ছাপ। গভীর বেদনায় নীল হয়ে আছে। 

মইন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল

-তো, আমার বিয়েটা যেহেতু খুব জরুরি সেহেতু করেই ফেলি।তবে সব দায়িত্ব যে তোমাকেই নিতে হবে যুবা মাস্টার। 

নিবিড় তৃপ্তির হাসি  হাসলো। মইন চোখ ভরে সেই হাসি দেখলো। 

তার না বলা ভালবাসা,না বলা অনুভূতির কবর দিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। 


সুমনের ফ্ল্যাইট আগামী পড়শু। এ দিকটা এখনো অগোছালো। ম্যানেজার সুভ্রত যতটুকু পারছে গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছে৷ সুমন অফিস যাচ্ছে না,সারাদিন বাসাতেই থাকে।ইদানীং সুমন কে দেখলে যে কেউ আতকে উঠবে৷ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মুখ ভর্তি দাড়িতে সারা চেহারা ঢাকা। চোখ দুটি ভেতরে ঢুকে গেছে। সারাক্ষণ মুখ অন্ধকার করে হাতে একটা বই নিয়ে বসে থাকে। বাড়ির কাজের লোকগুলো যার যার মত বাড়ির দেখাশোনা করে৷ সুমনের সে দিকে খেয়াল নেই৷ সে কেবল ভাবে, তার জীবনের এই করুণ পরিণিতির কথা৷ ভালবাসা ছাড়া এমন তুচ্ছভাবে বেঁচে থাকার কথা ছিল না তার৷ অথচ এটাই হলো তার নিয়তি৷ নিবিড় তাকে এভাবে একা করে দিবে সেটা সে ভাবেনি। এতগুলো বছর পর ও সে আশা জাগিয়ে রাখে নিবিড় ফিরবে। 

গতকাল রাতে সুমন নিবিড়কে স্বপ্ন দেখলো। নিবিড়ের হাত ভর্তি লাল টকটকে গোলাপ। নিবিড় সেই গোলাপ রাস্তায় দাঁড়ানো মানুষকে বিলিয়ে দিচ্ছে৷ সুমন বারবার চাচ্ছে কিন্তু নিবিড় তাকে ফুল দিচ্ছে না৷ 

স্বপ্ন দেখার পর থেকে সুমনের মনটা আরো অস্থির হয়ে গেল৷ সে কফি হাতে বারান্দায় বসে বসে ভাবতে লাগলো পুরানো কিছু দিনের কথা, 

একদিন এক গ্রীষ্মের দিনে সুমন বাহির থেকে বাড়িতে ফিরে দেখে তার সারা রুম নানান ফুলে সাজানো৷ সুমন বিস্মিত হয়ে তাদের কাজের লোক জব্বারকে ডেকে জিজ্ঞেস করল- রুম কে সাজিয়েছে। জব্বার তার মুখের সব কয়টা দাঁত বের করে হেসে বলল-বলতে মানা স্যার। 

সুমন কিছু বলল না। ফুলের ঘ্রাণে তার মাথা ঝিমঝিম করছে৷ তার মনে হলো ফুলের সাথে অন্য আরেকজনের ঘ্রাণ মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে। কে হতে পারে? 

সুমন রুম থেকে বের হয়ে নিচ তলায় নামতেই দেখল অহনা সোফায় বসে আছে। সে অহনাকে জিজ্ঞেস করল

-কিরে, রুম সাজালো কে? 

অহনা মুচকি হেসে উত্তর দিল, 

-কে সাজিয়েছে জানি না। তবে কেন সাজিয়েছে জানি। 

-কেন সাজিয়েছে?

-আজ কত তারিখ ভাইয়া? 

-বারো অক্টোবর। 

-বারো অক্টোবর কী? 

-আমি জানি না তো? 

-না জানলে রুমে গিয়ে বসে থাকো। 

সুমন আর কথা বাড়ায়নি। চুপচাপ ঢুকে গেল। এর ঘন্টা খানেক বাদে নিচ থেকে নিবিড়ের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল৷ 

-সুমন স্যার, একটু নিচে আসবেন? 

সুমন নিচে নামলো। ড্রয়িংরুম ভর্তি মানুষ। টেবিলে বড় কেক সাজানো। 

একি! আজ সুমনের জন্মদিন? অথচ সুমন নিজেই ভুলে গিয়েছিল। এ সব কিছু নিবিড় নিজ হাতে করেছে৷ 

পুরানো দিনের কথা ভেবে সুমনের চোখের কোণায় পানি। আজ এত গুলো বছরে ও সুমন ভুলতে পারছে না সেই অতীত৷ ভালবাসা তার রক্তের সাথে মিশে গেছে। 


আজ সুমনের ফ্লাইট৷ রাত নয়টায়। সুমন খুব ভোরে খুব থেকে জেগেছে৷ ম্যানেজার সুভ্রত সেই সকাল থেকে ড্রয়িংরুমে বসে আছে অফিসের ফাইল পত্র নিয়ে৷ সুমনের নিচে নামতে ইচ্ছে হচ্ছে না। শেষবার সে মিতুকে কল করেছিল। মিতু ধরেনি। এই ঘর, এই বাড়ি সর্বত্র একটা সময় নিবিড় ঘুরে বেড়িয়েছে। এই বিছানায় সর্ব প্রথম তাদের মিলন হয়েছিল৷ এই শহরের প্রতিটি জায়গা তাদের চেনা৷ সব জায়গায় তাদের স্মৃতি৷ আজ সব ছেড়ে সুমন বিদায় নিবে। আজ সব ফেলে অজানা এক দেশে যাপিত জীবনের কষ্ট ভোগের জন্য সুমন প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

শেষবারের মত নিবিড়ের চেহারাটা দেখার জন্য সুমনের মন কেমন করছিল৷ 

একদিন এক রাতে নিবির সুমনের বুকে মাথা রেখে বলেছিল, 

-আচ্ছা বলেন তো, সমাজ, ধর্ম,রাষ্ট্র তো আমাদের সম্পর্কটা কোন দিন মেনে নিবে না৷ তখন আমরা কী করব? 

-আমরা সেদিন পালিয়ে যাব৷ দূর কোন দেশে৷ 

নিয়তি উলটে গেল। তারা পালিয়ে তো যাচ্ছে, তবে আলাদা আলাদা। 

সুমন নিচে নামলো। ম্যানেজার সুভ্রত নিচে বসে থাকার কথা। কিন্তু কেউ নেই। বরং সে অবাক হলো, সারা বাড়ি ফুলে সাজানো। কে সাজালো? সুমন তাদের পুরাতন কাজের লোক জব্বারকে ডাকলো। কিন্তু সে আজ বাসায় নেই৷ সুমন দাঁড়িয়ে ফুলে ফুলে সাজানো তার বাড়িটা দেখছিল৷ তার হৃদয় তখন কাঁপছে৷ কিছু কী ঘটতে চলছে? কী ঘটবে? 

সুমন নিজের মনকে আশ্বস্ত করতে চোখ বন্ধ করলো। ঠিক সেই সময় সে উপলব্ধি করলো কারো ঘ্রাণে তার সারা ঘর ভরে আছে৷ সেই আদিম ঘ্রাণ৷ সেই মাতাল করা স্নিগ্ধ ঘ্রাণ। সুমন চোখ খোলে তাকালো। নাহ, কেউ নেই৷ তবে তার মনে হচ্ছে কেউ একজন আছে৷ সে দরজার কাছে গেল। আর ঠিক সেই সময় বজ্র বেগে কেউ একজন এসে তাকে ঝাপটে ধরলো।

সুমনের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল কয়েক গুণ৷ এ যে তার নিবিড়৷ তার অন্তর আত্মা। সুমন নিবিড়কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত কেঁদে দিল। এত দিন পর সে মানুষটাকে জড়িয়ে ধরেছে, এ যেন স্বর্গ হাতে পাওয়া৷ নিবিড় ও কাঁদছে৷। আহা!এত বিরহ, এত কষ্টের সমাপ্তি হলো৷ দুটি হৃদয় এত ছটফটানোর পর এক হলো৷ 

সব কিছু মিতু করেছে৷ তাদের ডিভোর্স হওয়ার দিন ই সে গোসাইপুরের নিবিড় চড়ে গিয়ে উঠে৷ অতীতের ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা নিবিড়কে বলল মিতু৷ কী ভয়ানক জীবন কাটিয়েছে সুমন। কী যন্ত্রনায় সে দেশ ছাড়ছে৷ কত পবিত্র ভালবাসা সুমনের হৃদয়ে নিবিড়ের জন্য। এই ভালবাসার স্বর্গকে পায়ে না ঠেলতে অনুরোধ করে মিতু। 

নিবিড় আর থাকতে পারেনি। সব ভুলে সে ছুটে আসে সুমনের কাছে৷ যে শূণ্যস্থান তৈরি হয়েছিল তা পূরণ করার জন্য সে তার সব মান অভিমান ত্যাগ করে ফিরে আসে। 


মধ্যরাত। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহর। নিবিড় আধৌ ঘুমে, সুমন এখনো ফিরেনি৷ অপেক্ষা করতে করতে সে ঘুমিয়ে গেছে৷ তাদের দত্তক নেওয়া তিন বছরের মেয়ে মিতু ঘুমিয়ে গেছে। সুমন ফিরলো আরো খানিক বাদে৷ মিটিং ছিল, তাই দেরি৷ তার হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ, আর কিছু চকলেট। সে গোলাপ আর চকলেট বিছানার পাশে রেখে প্রথমে মিতুর কপালে চুমু খেল তারপর ও পাশে নিবিড়ের কাছে গেল৷ সে নিবিড়ের মাথায় হাত দিল৷ নিবিড় চোখ না খোলে ই বলল

-খাবে না? 

সুমন নিবিড়ের কপালে চুমু খেয়ে ঝোকে তার বুকে মাথাটা নিয়ে বলল

-তুমি খেয়েছ? 

নিবিড় মুচকি হেসে বলল

-তোমাকে ফেলে কখনো খেয়েছি পাগল? 

নিবিড় তার হাত দিয়ে সুমন কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল৷ সুমন মাথা তুলে নিবিড়ের ঠোটে চুমু খেয়ে বলল

-তাহলে উঠ। রাত হয়েছে। 

-ফ্রেশ হয়ে আসো। 

সুমন ফ্রেশ হতে গেল। নিবিড় কিচেনের জানালা খোলে দিল। খাবার টেবিলে ভরা পূর্ণিমার জোৎসা এসে পড়েছে৷ সুমন বের হয়ে দেখে নিবিড় জোৎস্নার আলোয় মাখামাখি। মুগ্ধ হয়ে সুমন পিছন থেকে নিবিড়কে জড়িয়ে ধরে গলায় চুমু খেল। 

রাত তখন গভীর থেকে গভীর হচ্ছে। পরম ভালবাসায় অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে দুজন মানুষ ভালবাসার আবেগে এক আদিম অনুভব বিনিময়ে ব্যস্ত।মহান প্রকৃতি তাদের ভালবাসা জীবন্ত রাখুক। 

....সমাপ্ত......


শূণ্যস্থান-৬ (অন্তিম পর্ব) শূণ্যস্থান-৬ (অন্তিম পর্ব) Reviewed by সমপ্রেমের গল্প on April 12, 2022 Rating: 5

7 comments:

  1. অসম্ভব সুন্দর হইছে

    ReplyDelete
  2. ঋতুরাজMay 23, 2022 at 11:40 AM

    খুবই সুন্দর লিখেছেন,

    ReplyDelete
  3. Wow আরো এই রকম গল্প চাই

    ReplyDelete
  4. অবশেষে

    ReplyDelete
  5. তেমন মজাদার হয়নি

    ReplyDelete
  6. বেস্ট স্টোরি 💙🤍❤️

    ReplyDelete
  7. Vhia acta baby thakbe Amon acta golpo lekha jaina

    ReplyDelete

Powered by Blogger.