Onlyfan Premium Videos

শূণ্যস্থান-৫

গল্পঃ- শূণ্যস্থান -৫

লেখকঃ- আরভান শান আরাফ


বাহিরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি সুমনের হৃদয়ে৷ দীর্ঘ চারটা বছর পর নিবিড় তার সামনে। যে মানুষটাকে ভালবেসে তার এতগুলো দিন রাত্রি অপেক্ষা করা, সেই মানুষটা তার সামনে৷ অন্য দিকে নিবিড় পাথরের মত শক্ত হয়ে আছে৷ ছেড়ে দেওয়ার পর ফিরে আসার বিড়ম্বনায় সে প্রাণহীন। কী করবে সে? কেন আজ সুমন তার সামনে এসে দাঁড়ালো? যে দূরত্ব সে নিজ হাতে তৈরি করেছে, সেই দূরত্ব কমানোর কী দরকার ছিল? 

মিনিট পাঁচেক পর সুমন কথা বলল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সে নিবিড়কে জিজ্ঞেস করলো

-কেমন আছো নিবিড়? 

নিবিড় সুমনের দিকে তাকালো। সুমনের চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে। মশালের আলো অশ্রুবিন্দুতে পড়ে চিকচিক করছিল। নিবিড় তাকিয়ে ই রইল। কিছু বলেনি।সুমন আবার প্রশ্ন করলো

-বলবে না, কেমন আছো? 

নিবিড় এবার উত্তর দিলো 

-সেটা জানা খুব জরুরি? 

-এভাবে কেন বলছ? তুমি জানো, তুমিহীন এতগুলো বছর আমি কীভাবে কাটিয়েছি? কীভাবে বেঁচে আছি৷ 

-নাহ, জানি না। আর জানতে ও চাই না। রাত অনেক হয়েছে। দয়া করে আমাকে বাঁচতে দেন।আর আপনি ও বাঁচুন। চলে যান। 

-চলে যেতে বলছ? 

-হ্যা, বলছি। দয়া করে চলে যান৷ নতুবা আমি চলে যাব। 

সুমন বিস্ময়ে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিবিড় রাগে নিজেই ঘর থেকে বের হয়ে গেল৷ বাহিরে উন্মাদের মত বৃষ্টি, নিবিড়ের গৃহে সুমন পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে। কেবল চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু ধারা। 


মইনুদ্দিনের মন গতকাল থেকে অস্থির হয়ে আছে৷ নানান সময় নানান চিন্তার উদ্রেক হচ্ছিল। রাতে ছেড়ে ছেড়ে ঘুম হয়েছিল।যার কারনে সকালে ঘুম ভাঙলো দেরিতে।রাধানগর গ্রামে একটা প্রাথমিক স্কুলের খুব দরকার। বোর্ড অফিসে যেয়ে এসে পড়াটা খুব কষ্টকর বাচ্চাদের জন্য। তাছাড়া মুকন্দপুরের বাচ্চাদের ও কষ্ট লাগব হবে। সেটা নিয়ে গোসাইপুরের প্রতিনিধির সাথে কথা বলা প্রয়োজন৷ নিবিড় গেলে হয়তো বুঝিয়ে বলতে পারবে। কথা হচ্ছে নিবিড় যাবে তো? 

সারা রাত নিবিড় নৌকায় ঘুমিয়েছিল। আজ সে অনেকটা শক্ত। সে সুমনের মুখোমুখি হয়েছে। ভেঙ্গে পড়ার যে ভয় তাকে ভীত করতো সে ভয়টা আর সে পাচ্ছে না। সে সুমনকে ভালবেসেছিল৷ পাগলের মত। কিন্তু সুমন সে ভালবাসার মর্যাদা রাখেনি। অহনা ও তার বন্ধুত্বের কোন গুরুত্ব দেয়নি। আজ এতগুলো বছর পর সে নতুন করে বাঁচতে শিখেছে। আজ তাকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। যা ছেড়ে দিয়েছে, তা ফেরত পাওয়ার কোন বাসনা তার নেই। 

ঘরে ফিরে এলো নিবিড়। সম্পুর্ন ঘর খালি। সুমন ফিরে গেছে। আজ কালকের মধ্যে হয়তো সে চলে যাবে তার অট্টালিকায়। মিতুকে নিয়ে সে সুখে থাকুক। নিবিড় বেছে নিয়েছে চির একাকিত্বের পথ। এই পথের শেষ সে নিজে পছন্দ করবে৷ অন্য কারো অধিকার নেই। 

আজ স্কুল খোলবে। নিবিড় নিজেকে প্রস্তুত করে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে ঠিক সেই সময় মইনুদ্দিন দরজার সামনে এসে হাজির। নিবিড় পায়ের শব্দে চমকিত হয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখে মইনুদ্দিন দাঁড়িয়ে। 

-আরে আপনি? 

-চলে আসলাম, স্বার্থ হাসিলের জন্য। 

-আমার মত কারো কাছে অন্যের স্বার্থ থাকে না৷ 

-কিন্তু, আমার স্বার্থ আছে বৈকি। 

-হেঁয়ালি না করে সত্যটা বলার অনুরোধ জানালাম, জনাব

-একবার গোসাইপুর যেতে হয় যে।

-তা কীসের জন্য? 

-বলেছিলাম তো, রাধানগরে প্রাথমিক স্কুলের ব্যাপারে চেয়্যারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলতে হবে। আর তোমার চেয়ে ভাল ওনাকে কেউ ই বুঝাতে পারবে না। 

-তা, এখনি যেতে হবে? স্কুলের শেষে গেলে হবে না? 

-সেটা তুমি যখন বলো। 

আজ অনেক কথা হলো নিবিড় আর মইনের মধ্যে। নিবিড়ের সাথে কথা বলতে মইনের অনেক ভাল লাগে। মনে হয় সে তার বাল্যকালের বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে৷ অথবা সেই ছেলেটা, যার সাথে কলেজের সময়ে তার আন্তরিকতা ছিল। যার জন্য রাত জেগে সে আজেবাজে কল্পনা করতো। অথচ, নিবিড় হয়তো মইনকে অন্য সবার মত ই দেখে। মইন যখন নিবিড়ের সাথে আন্তরিক হচ্ছিল নিবিড় তখন সুমনের কথা ভেবে অস্থির। 

কেমন আছে এখন মানুষটা? সে কি সুস্থ্য আছে?আহা! কাল রাতে এমন করা কি ঠিক হলো?ইশ্বর! সব কিছু আগের মত হওয়া সম্ভব? 

নিবিড় দুটানায় ক্লান্ত৷ তার মন দ্বিচিড়ে বিভক্ত। এ মনের এক অদ্ভুত খেল। এক মন বলে কাছে আসুক, আরেক মন বলে দূরে থাকুক৷

সুমন সারা রাত্রি বাহিরে ই ছিল। ভোরের আলো ফোটার পর অহনার বাসায় ফিরেছে। আগের চেয়ে অধিক শান্ত সে৷ নিবিড় তাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবে ভাবতে পারেনি৷ এত দিন সে কেবল অপেক্ষা করেছিল, একবার নিবিড়ের সাথে দেখা হোক। আজ দেখা তো হলো কিন্তু মানুষটা আগের মত নেই। বদলে গেছে। এই চড়ের মানুষ আর প্রকৃতির মত সে হয়ে গেছে রুক্ষ আর মনহীন। 

সুমন যখন বাড়ি ফিরলো মিতু তখন ঘুমে। অহনা এক কাপ কফি হাতে বারান্দায় বসে ছিল৷ সুমন কে আসতে দেখে সে দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো

-দেখা হয়েছে? 

সুমন কিছু বলেনি। অহনাকে জড়িয়ে ধরে উন্মাদের মত কেঁদে দিল। অহনার ভেতরে মুচড়ে উঠলো৷ একি, তার ভাইকে এভাবে কোন দিন কাঁদতে দেখেনি সে৷ এভাবে ভেঙ্গে পড়েনি সে। কী হচ্ছে এসব? অহনা সুমন কে শান্ত করে তার রুমে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিজের রুমে আসলো। তার নিবিড়ের সাথে একবার কথা বলা জরুরি। সে তার ভাইয়ের জীবনে ফিরে না আসুক৷ ক্ষমা তো করতেই পারে। 


সেদিন সুমন যখন বর বেশে ছিল আর নিবিড় সুমনকে ছেড়ে চলে এসেছিল ঐদিন যে পরিমাণ কষ্ট নিবিড় পাচ্ছিল আজ তারচেয়ে ভয়ানক কষ্ট পাচ্ছে সে৷ গেল রাত সে তো সুমনকে অপমান করে নিজেই ঘর ছেড়ে এসেছিল কিন্তু আজ এতগুলো বছর পর নিবিড়ের একবার ইচ্ছে করছে সে সুমনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ুক৷ পেছনের সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু হোক সব। কিন্তু যখন ই তার মনে হয় সুমনের একটা পরিবার আছে,সে অন্য কারো স্বামী তখন তার মন অস্থির হয়ে উঠে বেদনায়। নিজের ভালো থাকার জন্য আরেক জনের সংসার ভেঙ্গে দেওয়ার মত স্বার্থপর সে নই৷ তাছাড়া তার আরেক মন নিশ্চিত ছিল যে সুমন তাকে ভালো ই বাসেনি। ভালো বাসলে এত বড় ধোকা দেওয়ার কথা না।

নিবিড়ের ক্লাস নেওয়ার কথা ছিল। সে ক্লাস রুমে ঢুকে আবার বের হয়ে এসেছে। অনেক দিন পর নিবিড়ের চেহারায় এমন বিষণ্ণতা দেখে প্রবীণ শিক্ষক জালালুদ্দিন চিন্তিত। সে যুবা মাস্টরকে এর আগে এমন কখনো দেখেনি৷ বোর্ড অফিসের হাই স্কুলের কেউ বলতে পারবে না তাদের মাস্টর কখনো মন খারাপ করে রেখেছিল। সে নিবিড়ের পাশে বসতে বসতে বলল

-বাজানের নি মন হরাপ? 

নিবিড় মিছে এক গাল হেসে বলল

-আরে নাহ! কী যে বলুন না।

-মন হরাপ না থাহা ই ভালো। তবে, মন যদি হরাপ তাকে তবে বিহালে চড়ের পূব পাড় ঘুরে আয়লে মন ভাল হয়ে যায়ব৷ অইত্যাধিক সুন্দর জায়গা। বড়ই বিউটিফুল। নিবিড় আবারো মুচকি হেসে ভাবনায় তলিয়ে গেল। জীবন তাকে সুখ দেয়নি, সে জোর করে আর কত সুখি হবে?অথবা এমন সুখের অভিনয় করে কত কাল আর বেঁচে থাকবে? 


বিকেলের দিকে সুমন পুকুর পাড়ে বসে ছিল। ঠিক সেই সময় কইতরি পাশ দিয়ে যাচ্ছিল৷ সুমন কে দেখে সে থমকে দাঁড়ালো। 

-আরে,আফনি। এখনো আছেন চড়ে? 

সুমন ফিরে তাকালো। তার মন বিষণ্ণ  তবু বলল

-হ্যা আছি৷ হয়তো আর যাবো না৷ 

-অ আল্লা! যাবেন কেন? তা এহানে বসে আছেন কেরে? আয়েন পুব পাড় থিক্কা ঘুরে আসি৷ বিকালে পূব পাড় খুবই সুন্দর। 

সুমনের যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না৷ কিন্তু কইতরির জোরাজোরিতে উঠে দাঁড়ালো। 

বিস্তৃর্ণ চড়ের পুব দিকটাতে কিছুদিন আগে মাটি জড়ো হয়ে চড় জেগেছে। বিশাল নদীর তীরে বালুময় চড় সমুদ্র সৈকতের মত লাগে৷ এখানে সূর্য ডুবে৷ শেষ বিকেলে নদীতে আকাশ আর সূর্যের বিম্ব অদ্ভুত সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। সুমন বিশ্মিত হলো, সত্য ই সুন্দর। সে মুগ্ধ হয়ে সূর্য ডুবা দেখছিল। সেই ফাঁকে কইতরি চলে ও গেল। সুমন খেয়াল করেনি। সে সূর্য ডুবা দেখছে।হঠাৎ তার মন অস্থির হয়ে গেল। তার মন হলো আশেপাশে কোথাও নিবিড় আছে। সে চারদিকটা ভাল করে তাকাতেই দেখলো খানিক দূরে একটা হিজল গাছের নিচে কেউ একজন বসা। এটা কে? নিবিড় নয়তো? সুমন এগিয়ে গেল। 

হ্যা! নিবিড় ই তো। সুমন গলা ছেড়ে নিবিড়ের নাম ধরে ডাক দিলো। নিবিড় সুমনের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হলো, কারন সে মনে মনে চাচ্ছিলো, আরো একবার সুমনের সাথে তার দেখা হোক৷ আরো একবার সে সুমনকে স্পর্শ করে দেখতে চায়। 

নিবিড় থমকে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো? সুমন প্রাণপ্রণে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর নিবিড় জড় পদার্থের মত আবেগ শূণ্য হয়ে দাঁড়িয়ে।সুমন দূর থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে আবারো বলল

-নিবিড়,যেয়ো না তুমি। আমি আসছি। 

নিবিড় এগিয়ে গেল সুমনের দিকে। সূর্য তখন আস্ত যাচ্ছে৷ সুমন আর নিবিড় আবারো মুখোমুখি। ঠিক সেই সেই মিতু এসে উপস্থিত। সাথে অহনা আর জাবের। নিবিড় সবাইকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।

নিবিড় অহনার দিকে তাকিয়ে বলল

-কেমন আছিস? 

অহনা মৃদ হেসে বলল

-যেমন দেখছিস তেমন ই। 

মিতুর দিকে তাকিয়ে বলল

-আপনি তাহলে সুমনের ওয়াইফ। 

মিতু কিছু না বলে সুমনের বলার অপেক্ষায়। সে চাচ্ছে আজকে সব শেষ হয়ে যাক৷ জীবনের এই টানাপোড়েন,ভালবাসার ঘাটতি। সে মন থেকে চাই সুমন আর নিবিড় এক হয়ে যাক কিন্তু সে কি পারবে সুমন কে ছাড়া থাকতে। আজ যে তার বড় পরিক্ষার দিন। 


ভরা পূর্ণিমার চাঁদের আলো মেঘনার জলে। অতীতের পরিচিত অনেকগুলো মানুষ আজ মুখোমুখি। অহনা আর মিতু নিবিড়কে ঐ সময়কার সব ঘটনা, সুমনের কষ্টের কথা সব বলল৷ নিবিড় দাঁড়িয়ে থেকে শুধু শুনে গেল। 

সুমনের চোখে পানি ছিল, কিন্তু নিবিড় ছিল পাথরের মত শক্ত। সুমন সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিবিড়ের পায়ের কাছে হাঁটুতে বসে বলল

-আমাকে ক্ষমা করো নিবিড়। তোমাকে ছেড়ে আমি আর থাকতে পারব না। প্লিজ আমাকে মাফ করো। তোমার সাথে করা,অন্যায়ের বোঝা বয়ে আমি আর চলতে পারছি না। 

নিবিড় সুমনকে টেনে তুলে বলল

-ক্ষমা করে দিলাম৷ তুমি সুখি হও তোমার স্ত্রীকে নিয়ে।আমার আর তোমার জীবনের পথ আলাদা হয়ে গেছে সুমন। এখন আর কিছুই আগের মত হওয়ার মত অবশিষ্ট নেই। ভালো থেকো৷ আর যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা ফিরে যাও৷ এই চড়ে তোমাকে যত দেখব আমি তত কষ্ট পাবো। প্লিজ! আমাকে একা ছেড়ে দাও। 

বলেই হন হন করে হেঁটে নিবিড় চলে গেল। সুমন,অহনা,জাবের সবাই তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সুমন বড় আশা করে এসেছিল সব ঠিক হয়ে যাবে৷ সে কখনো ভাবেনি, নিবিড় তাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবে।


নিবিড় আজ বাসায় যায়নি৷ সোজা  চলে গেল নদীর ঘাটে।লোক শূণ্য ঘাটে সে চিৎকার করে কাঁদছে। এমনটা তো কথা ছিল না৷ যে মানুষটাকে সে এভাবে ভালবেসেছিল, সে মানুষটা একদিন সামাজিকতার দোহায় দিয়ে হুট করে অন্যের হয়ে গেল৷ আজ এত বছর পর সে পুরানো দিন ফেরত পেতে যাচ্ছে৷ অথচ এত কষ্ট,এত যন্ত্রনা সে পেঁয়ে শুধু এই একটা মানুষের জন্য।চায়লে ই কি সব পাওয়া যায়? সুমন চলে যাক। সুখি হোম সে মিতুকে নিয়ে। নিবিড় বেছে নিয়েছে চির একাকিত্বের পথ। 

....(চলবে)...... 

বিঃদ্রঃ---ভালো লাগলে শেয়ার ও কমেন্ট করে আগ্রহ বাড়ানোর অনুরোধ রইল। 
শূণ্যস্থান গল্পের অন্তিম পর্ব আপনাদের কমেন্টের উপর ভিত্তি করে আপলোড করা হবে। 
আপনারা কী চান জানাবেন অবশ্যই। 

 

শূণ্যস্থান-৫ শূণ্যস্থান-৫ Reviewed by সমপ্রেমের গল্প on February 12, 2022 Rating: 5

1 comment:

Powered by Blogger.