Onlyfan Premium Videos

বাদলা দিনের গান

 গল্পঃ বাদলা দিনের গান


লেখকঃ আরভান শান আরাফ

মাত্র দুইটা দিন, তারপর জয়িতা আর আমার সম্পর্কটা চিরদিনের জন্য শেষ হয়ে যাবে।অথচ ওকে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিল৷ আমাদের বিয়ের দু বছর ও ঘুরেনি, জয়িতা আমাকে ছেড়ে দিবে।হয়তো চিরদিনের জন্য আমি একা হয়ে যাব৷ নতুন করে কারো জীবনে জড়ানোর মত শক্তি আর অবশিষ্ট নেই।জয়িতা চলে যাওয়ার সাথে সাথে জীবন থেকে সব চলে যাবে। আমার সুখ,বেঁচে থাকার ইচ্ছে, আনন্দ। 

আমাদের বিয়েটা হয়েছিল পারিবারিক ভাবে।বড় মামা মুখের সামনে এনে ছবিটা ধরে বলেছিল

-এই মেয়েরে যদি পছন্দ না হয় তবে আমার কান কাইট্টা লামু। 

আমি ছবিটা দেখেছিলাম দুদিন পর।অফিসের লাল ফাইলের ভেতর পড়ে ছিল। আমি ফাইল খোলার সময় চোখ আটকে গেলো অতি সাধারণ একটা ছবি দেখে।আমি সেদিন ই মামাকে ফোন করে হ্যা উত্তর দিয়ে দিয়েছিলাম। 

জয়িতার সাথে শুরুটা সুন্দর ই ছিল। প্রেম ছিল, ভালবাসা ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে কী যে হয়েছিল, না জয়িতার সংসারে মন ছিল না আমার। জয়িতা বাবার বাড়ি গেলে আর আসতে চায়তো না। আমার এত বড় বাড়িতে সুখের অভাব ছিল না। রান্না থেকে ধরে সব কাজ করার লোক ছিল। জয়িতাকে আমি রাণীর মত করে রেখেছিলাম৷ তারপরে কেন জয়িতার মন উঠে গিয়েছিল সংসার থেকে তা বুঝতে পারিনি আমি আজো। 

অথচ একটা সময় আমি ভাবতাম হয়তো আমার ই দোষ৷ ব্যবসার কাজে আমাকে প্রায় বাড়ির বাহিরে থাকতে হতো। একা বাড়িতে জয়িতা হয়তো নিরানন্দ হয়ে যাবে। তাই ওর পরিবারকে ও এখানে চলে আসতে বলেছিলাম৷ ওরা আসতে ও চেয়েছিল। কিন্তু জয়িতা ই মানা করে দিল। 

জয়িতার দূরে যাওয়াটা আমাকে কষ্ট দিত। কিন্তু মুখ খোলে কিছু বলিনি৷ যেদিন ওর প্রাক্তন প্রেমিক বাসায় এসে উঠল। সেদিন আমার ফেরার কথা ছিল না৷ ভর সন্ধ্যায় ডাউনীং রুমে প্লেটে ভাত বেড়ে খাওয়াতে দেখে জয়িতা লজ্জায় লাল হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আমি একটা কথা ও বলিনি৷ অথচ জয়িতা একদিন ও আমার প্লেটে হাসি মুখে এক টুকরা মাছ ও তুলে দেয়নি। 

মামা মামী কত বলতো, আমি গুরুত্ব দিতাম না। আজ চোখের সামনে দেখার পর কিছু বলার ছিল না। 

যেদিন রাতে জয়িতা আমাকে ঘুমের ঔষধ খায়য়ে গহনা আর টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল সেদিন ও কিছু বলিনি৷ ক্ষমা করে দিয়েছিলাম৷ কারন, জয়িতাকে ভালবেসেছিলাম আমি। 

জয়িতাকে ডিভোর্স দিয়ে আর বাসায় ফিরিনি। শূণ্য ঘরে ফেরার মানে হয় না৷ একবার ভেবেছিলাম ছোট ভাই সুমন কে বাহির থেকে আনিয়ে সব বুঝিয়ে দিয়ে দূরে কোথাও চলে যায়। পরক্ষণে ভাবলাম ভাই আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য গিয়েছে৷ ওকে এসবে না জড়ানো ই ভাল। 

সেদিন অফিস যাওয়ার পথে জ্যামে আটকা পড়ে মোবাইলে পুরানো দিনের ছবিগুলো স্ক্রল করে দেখছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম রাস্তার পাশে শোরগোল। আমি গাড়ির জানালার কাচ সরিয়ে একজন পথচারীকে জিজ্ঞেস করলাম শোরগোলের কারন। পথচারী বিরস মুখে উত্তর দিল যে,সে জানে না। খানিকবাদে খেয়াল করলাম পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে একজন বৃদ্ধা মহিলার মাথা চেপে ধরে এগিয়ে আসছে৷ মাথা ফেটে রক্তে তার সাদা শার্ট লাল হয়ে আছে। সেই বৃদ্ধাকে আমার গাড়ির পাশে এনে বলল 

-স্যার, একটু হেল্প করুন। 

আমি ড্রাইভারকে বলে তাদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে অফিসে বাসে করে পৌঁছলাম। 

ড্রাইভার ফিরল দু ঘন্টা পরে। আমি তখন অফিস মিটিং শেষ করে উত্তরার ব্রাঞ্চে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমাকে দেখে ড্রাইভার নজরুল কাচুমাচু করে বলল

-স্যার একটু দেরি হয়ে গেল। 

আমি বিস্ময় চাপিয়ে রেখে বললাম

-কেন? হাসপাতাল তো কাছে ই ছিল।

-নাহ মানে,বৃদ্ধা গাড়িতেই মারা যান। ছেলেটা অনেক করে বলল, তাই বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতে হয়েছে।। 

-আচ্ছা যাও,গাড়ি বের করো। 


এর কিছুদিন পর অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়ে ই শুনি বিরোধীদল হরতালের ডাক দিয়েছে। আমার বাড়ির সামনে ট্রায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে।তারুপরে আজ ড্রাইভার ও আসেনি। কোন মতে গাড়িটা নিয়ে মিরপুর ক্রস করতেই দেখি বাসে আগুন দিয়ে দিল৷ আমি একটা গলিতে ঢুকতে যাব ঠিক সেই সময় দশবারো জন এসে লাঠি আর স্টাম্প নিয়ে আমার গাড়িতে  হামলা করলো। আমি নিজেকে বাঁচাতে গাড়ি না থামিয়ে ফুল স্পীডে গাড়ি ছেড়ে দিলাম। কিন্তু একটা সময় গলির ভেতরে গাড়ি ব্রেইকফিল করে হুমড়ি খেয়ে রাস্তার পাশের বিদ্যুৎতের খুঁটির সাথে ধাক্কা খেলাম। আমার সারা শরীর ঝাঁকি দিয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই৷ চোখ খোলে নিজেকে হাসপাতালের কেবিনে আবিষ্কার করলাম।

আশেপাশে কেউ ছিল না। একটু দূরে একটা ছেলেকে দেখলাম ডাক্তারের সাথে কথা বলছে। আমি খেয়াল করলাম আমার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। বা পাশে চিনচিন ব্যথা। ডান হাতটাতে ও ব্যান্ডেজ। উঠতে গিয়ে মনে হল কোমড়ে ও খানিক ব্যথা৷ আমি উফ শব্দ করায় ছেলেটা এগিয়ে এলো। আমার মনে হচ্ছে, ছেলেটাকে আমি চিনি।কখন দেখেছি মনে করতে পারছি না।মাথার ব্যথাটা বাড়ছে। আমি চোখ বন্ধ করে আবার শোয়ে গেলাম। হয়ত ছেলেটা আমার পাশে এসে বসেছে। কিন্তু আমার মনে হলো, জয়িতা এসে বসল৷ জয়িতার হাতের কাচের চুড়ির রিনঝিন শব্দ আমার কানে। আমি ব্যথায় অস্থির হয়ে এক সময় হয়ত ঘুমিয়েছিলাম। 

ছাড়া পেলাম দু দিন পর। তখনো ঠিকঠাক সেরে উঠিনি।মেজো মামা কী করে যে খবর পেয়ে ছুটে এলেন।যে ছেলেটা আমাকে প্রায় আধমরা অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল তার কোন খবর ই পায়নি। হাওয়া হয়ে গিয়েছিল। বড় অদ্ভুত কিছু মানুষ।

সুস্থ্য হয়ে অফিসে গেলাম প্রায় এক সপ্তাহ পরে। অফিসে যাওয়ার পর সবার সেকি হায় হুতাশ। অথচ মরে পড়ে থাকলে ও কারো কোন কিছু যায় আসে না। আমি জানি,এত মায়া,এত আন্তরিকতা সব মেকি৷ মেকি মায়া দেখানোটা ইদানীং একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে৷

ইদানীং  রাত্রে ঘুম কম হচ্ছে৷ অফিসে ও কম যাচ্ছি। ম্যানেজার কাকা সব সামলাচ্ছেন৷ বড় মামা আছেন। মামীকে বলেছি চলে আসতে৷ অথচ মামী গ্রাম ছেড়ে নাকি শহরে এসে থাকতে চান না। 

মা বাবা মারা যাওয়ার পর বড় মামীর যত্নে বেড়ে উঠেছি৷তাই বড় মামীর প্রতি মায়াটা ও একটু বেশি৷ মামী চলে আসলে হয়তো মানসিকভাবে আরেকটু সবল হতাম। কিন্তু আসি আসি করে ওনি আসতে চাচ্ছেন না৷ জীবনটা আমার কোথায় যেন থমকে গেছে৷ 


সেদিন অফিসে একটা মিটিং শেষে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে ঢুকতে যাব ঠিক সেই সময় দায়োয়ান দৌড়ে এলো। আমি জানালার গ্লাস সরিয়ে কারন জিজ্ঞেস করায় সে বলল

-স্যার,একজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে আয়ছে৷ 

-ভেতরে পাঠাও। 

আমি রুমে ঢুকে, ফ্রেশ হতে হতে ঘন্টা দুয়েক লেগে গেল৷ 

যখন নিচে নামলাম তখন কেউ বসে নেই৷ আমি অবাক হয়ে ড্রাইভারকে কল করলাম

-কয়,পাঠালে না তো।

-স্যার,ওনি তো চলে গেলেন। 

ফোনটা নামিয়ে রাখলাম৷ ফার্স্ট টাইম নিজেকে গুরুত্বহীন মনে হতে লাগল। এর আগে আমার জন্য অপেক্ষা করাটাকে কেউ এইভাবে অবহেলা করেনি। রাগ হচ্ছিল। হঠাৎ খেয়াল হলো টেবিলের উপরে একটা কাগজ,ওয়াচ আর মানিব্যাগ রাখা৷ আমি অবাক হয়ে চিঠিটা হাতে নিলাম। খুব সুন্দর হাতের লেখায় স্পষ্ট বাংলায় লিখা

--"অনেক কষ্টে ঠিকানা সংগ্রহ করলাম। আপনার হাত ঘড়ি আর মানিব্যাগটা আমানত হিসেবে ছিল৷ চেক করে দেখবেন সব ঠিকাছে কিনা৷ ও হ্যা,কিছু টাকা হাসপাতালের বিল দিতে লেগেছিল৷ হিসেবের তালিকা মানিব্যাগে রাখা আছে। ""

আর কিছু ই লেখা নেই৷ কোন নাম ঠিকানা ও নেই। নিজের প্রতি বিরক্ত হলাম৷ এমন কেন করলাম? সাথে সাথে দেখা করলে ই হয়তো আজ ধন্যবাদ টুকু দিতে পারতাম। অন্যের অনুগ্রহ তলে এর আগে কখনো এই ভাবে চাপা পড়িনি। 

ঐ দিন রাতে প্রথমবারের মত আমি ছেলেটাকে স্বপ্নে দেখলাম। আমি নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম।নদীর পাড়ে সাদা বালি রোদ্রের আলোতে চিকচিক করছে৷ আমার পা খালি। কিছু দূর যাওয়ার পর খেয়াল করলাম আমার সাথে অতি সুন্দর একটা ছেলে৷ সে আমার হাত ধরার চেষ্টা করছে৷ আর আমি বারবার হাত সরিয়ে নিচ্ছি।এক পর্যায়ে সে যেন আমার হাতটা জোর করে ধরতে চাচ্ছে। আমি নদীর পানির উপর দিয়ে দৌড়াতে গিয়ে ডুবে যাচ্ছি৷ অদ্ভুত স্বপ্ন । এসি চালানো ছিল, তবু ঘেমে ঘুম থেকে জাগলাম। 

ঐদিন পর আর কিছু ভাল লাগেনি৷ সারাক্ষণ ওর কথা মনে হত। মনে হচ্ছিল ছেলেটার সাথে দেখা করা দরকার। কিন্তু কাউকে বলতে ও পারছিলাম না। তার দেখা ও পাচ্ছিলাম না। হুট করে সম্পুর্ণ অজানা,অচেনা একজন মানুষের আগমন জীবনটা বদলে দিল।


সারা দিন ধরে বৃষ্টির পর সন্ধ্যার দিকে আকাশ একটু বিরাম নিল৷ শুক্রবার ছিল তাই অফিসে কোন কাজ ছিল না। সারাদিন বাসায় থেকে থেকে বিরক্ত হয়ে রাতের দিকে বের হয়েছিলাম একটি হাঁটাহাঁটি করার জন্য। রাত তখন নয়টা কি দশটা হবে৷ শহর মোটামুটি শান্ত৷ গাড়ি কম৷ লোকজন ও সীমিত। বাসা থেকে একটু দূরে কফি শপে বসে কফির কাপে চুমুক দিতে ই খেয়াল করলাম আমার দিকে কেউ একজন তাকিয়ে আছে৷ মৃদ আলোয় চেহারাটা ঠিক বুঝা যাচ্ছিল না৷ তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল,ছেলেটা আমার চেনা।জড়তা কাটিয়ে কাছে যেতেই খেয়াল করলাম সে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। 

আমি পাশের চেয়ারটা,টেনে বসতে বসতে বললাম

-তুমি আমাকে চিন, তাই না? 

সে মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতি দিল। 

-ঐদিন তুমি ই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলে? 

সে আবারো মাথা নাড়ল। 

-মুখে বলা যায় না? 

-যায়, তবে বলতে ইচ্ছে হয় না। 

-কেন? 

-অহংকারী মানুষদের সাথে কথা বলার অভ্যাস নেই। 

আমি ছেলেটার দিকে তাকালাম। তার মাথায় কুকড়ানো চুল, কপালে এসে ঠেকেছে এলোমেলো হয়ে। তার বড় বড় চোখের মধ্যে অদ্ভুত সারল্যতা৷ লোকে চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝে যাবে ছেলেটার মন কাচের মত স্বচ্ছ। তার গাল ভর্তি খোচা খোচা দাঁড়ি৷চোখের নিচে কালো হয়ে আছে। যেন ঘন করে কাজল দিয়ে রেখেছে। অতি সাধারণ একটা ছেলে আমাকে মুগ্ধ করল৷ সে যখন বলল আমি অহংকারী তখন রাগ হলো না, কষ্ট পেলাম না। মনে হচ্ছিল এটাই যেন ঠিক। সে যেন সত্য ই বলেছে। আমি মুচকি হেসে বললাম

-উপকার করলে অথচ ধন্যবাদ দেওয়ার সুযোগটা না দিয়ে ই ধরে নিলে আমি অহংকারী? 

-অবশ্যই অহংকারী। উপকারের প্রতিদান তো অহংকারীরা ই দিতে চায়।  

আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম

-ঠিকানা বা ফোন নাম্বার দেওয়া যাবে? 

-কেন?

-ভয় পেয়ো না৷ উপকারের প্রতিদান নয়, একদিন আমার মত কারো সাথে মধ্যাহ্নভোজের জন্য। 

সে মুচকি হেসে টেবিলে রাখা ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বারটা টাইপ করে বলল

-নাম্বার দিয়ে দিলাম৷ ফোন দিলেই চলে আসব।

সে যখন চলে যাচ্ছিল তখন মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম। স্কীনে জ্বলজ্বল করছে তার নাম

- ফয়সাল


জীবনে অনেক হারিয়ে যখন কোথায় একটু শান্তি পাচ্ছিলাম না তখন ফয়সালের সাথে আমার পরিচয়। ঐদিন রাতে ই তাকে আমি ফোন করে পরের দিন দুপুরের খাবারের নিমন্ত্রণ করি।

সেদিনকার পর থেকে আমার জীবন অদ্ভুতভাবে পাল্টে যাচ্ছিল। ফয়সালের সাথে যে সূতা বাধা ছিল একদিন সেই সুতোয় টান পড়ল। আমার মন তার প্রতি ঝোঁকে গেল। জয়িতা নামের মেয়েটাকে ভুলে একটা ছেলের প্রতি মন কেমন করতে লাগল। মনে হচ্ছিল এটাই যেন স্বাভাবিক। এটাই শ্রেয়। বাদবাকি সব ভুল। 

আমাদের রোজ বিকেলে দেখা হত। আমি ওর সম্পর্কে তেমন জানতাম না। ও বলেনি, আমি ও জোর করিনি। আমি ওর সঙ্গ পেতাম সেটাই যেন অনেক। 

আমার এত অর্থ বিত্ত,এত নাম ডাক সব তুচ্ছ মনে হত। মনে হত ফয়সাল ই যেন আমার সব। ওর সাথে কথা না হলে অস্থির লাগতো। সদ্য কৈশরে পা দেওয়া বালকের মত লাগতো নিজেকে৷ একদিন আবিষ্কার করলাম, আমি ওকে ভালবাসি।এবং সেই ভালবাসাটা জয়িতার চেয়ে ও বেশি।

ভয় পাচ্ছিলাম, ফয়সাল যদি আমার ব্যপারে জেনে যায়৷ ওকে ভালবাসার অপরাধে যদি ছেড়ে দেয় আমাকে? 


আগে কাজে মন বসতো না। এখন সব কিছুতেই আনন্দ খোঁজে পাচ্ছিলাম। যার ফলে ব্যবসার উন্নতি হচ্ছিল দিন দিন৷ মামা খুশি৷ আমাকে ভাল থাকতে দেখে ছোট ভাইকে ও চিন্তামুক্ত মনে হচ্ছিল। জীবন সুন্দরভাবে বয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন অঘটন ঘটে গেল। 

সেদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে জাগার পরপর ফয়সালের জন্য মন কেমন করতে লাগলো। আমি ওকে আমার সাথে সকালের খাবার খেতে বললাম। বাহিরে তখন বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে ফয়সাল বাসায় এসে হাজির৷ ওর ভেজা শরীর দেখে আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। মনে হলো,এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হয় না। আমি ওকে আমার পাঞ্জাবি আর প্যান্ট দিলাম৷ কাপড় পালটে ও যখন বাহির হয়ে এলো তখন আমি স্থির থাকতে পারিনি। ফয়সালকে জড়িয়ে ধরে কামুকের মত ওর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসলাম। ঘটনার আকস্মিকতা বুঝে উঠতে ই ফয়সাল আমাকে ছাড়িয়ে হন হন করে বের হয়ে গেল। আমার হুশ হলো। অনুতাপের যন্ত্রনায় ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছিল তখন৷ এ আমি কি করলাম? 


টানা দু দিন ফয়সালকে লজ্জায় ফোন দিতে পারিনি।সে ও কোন খোঁজ নেয়নি। ভয় হচ্ছিল। ধরে নিয়েছিলাম ফয়সাল আর কোন দিন আমার সাথে যোগাযোগ করবে না৷ ভালবাসি সেটা বলার আগে ই ভালবাসা হারিয়ে ফেললাম। 

সেদিন বিকেলে আবারো বৃষ্টি নামল। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাগানের গাছ গুলোর বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া দেখছিলাম ঠিক তখন খেয়াল করলাম ফয়সাল বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাসার দিকে ঢুকছে৷ আমি প্রায় উন্মাদের মত মেইন গেইট খোলে বৃষ্টিতে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ আকাশ ফেটে বৃষ্টির ধারা ঝড়ছিল আর হৃদয়ে উন্মাদ ঝড়। সামনে ফয়সাল মুচকি হেসে দাঁড়ানো আর আমি ওকে জড়িয়ে ধরার আগ্রহে চাতকের মত ছটফটাচ্ছি। 

কথা বলল ফয়সাল

-দু, দিন তো খবর নিলেন না৷ 

-ভয় পাচ্ছিলাম।

-কিসের? 

-তোমাকে হারানোর। 

-ভালবাসলে কাউকে যেতে দিতে নেই। ধরে রাখা শিখতে হয়। 

আমি ফয়সালকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর গলায় চুমু খেতেই ও আমাকে আরো শক্ত করে ঝাপটে ধরলো। 

-আর যেতে দিব না। এবার শক্ত করে ধরলাম। 


দু বছর হলো আমরা একসাথে আছি। একটা নাম পরিচয়হীন অজ্ঞাত ছেলে আমার জীবনটা সুখে ভরিয়ে দিল। আমি সুখি। অনেক সুখি।

বাদলা দিনের গান বাদলা দিনের গান Reviewed by সমপ্রেমের গল্প on October 27, 2021 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.