.........................প্রতীক্ষিয়া...…..........................
..............আরভান শান আরাফ...........................
উৎসর্গঃসামজিদ আহমেদ আদর (#শোধবোধ)
বাবা বাসায় ফেরেন রাত করে। মা তখন ঘুমে থাকেন। আমি ল্যাপটপে ঝোঁকে পুরুষ দেখি৷ পুরুষ মানুষ দেখতে আমার সুখ লাগে।রাত জেগে পুরুষ দেখে রোজ ক্লাসে গিয়ে ঘুমাচ্ছি৷
আমাদের বাড়িটা শহরের শেষ বাড়ি। পূর্ব দিকে তিতাস, পশ্চিমে গ্রাম। তাই আমি দেখতে কিছুটা গ্রামের চাচাত ভাই টাইপ৷ আমার ক্লাস মেট সবাই শহুরে হলে ও আমি গ্রামের চাচাত ভাই হিসেবে ই বিখ্যাত। আমার বন্ধুদের ভিড়ে ক্যাবলা হিসেবে আমি ই সমাদৃত৷ এটা নিয়ে আমার গর্বের সীমা নেই৷
ও হ্যা, আমার পরিচয় ই দেওয়া হয়নি৷ আমি অন্তু৷ দ্বাদশ শ্রেণীতে কোনমতে টেনে টুনে উঠেছি।তা ও ফিজিক্সে ফেইল৷ হামজা স্যার আব্বুকে ডেকে নিয়ে বলল এই ছেলে সারা দিন কী করে?ফিজিক্সে পেয়েছ তেরো।বাসায় একটু প্রেসার দিবেন৷ আমি বাবার প্রেসারের অপেক্ষা করলাম কিন্তু বেচারা বাপ আমার, মায়ের প্রেসারে জীবন যায় যায়।
আমাদের বাসাটা দু তলা। এক তলায় বড় কাকা থাকেন আর দু তলায় আমরা। ছাদের চিলেকোঠার ঘর তন্ময় মামার দখলে।তন্ময় মামা বড় কাকার শালা। ফুফু ওনার পিছনে লাইন মারেন৷ কিন্তু বেচারা মামুর সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে সারাদিন ঘুরে ফিরে রাতে এসে ঘুমান। সারাদিনে তার আর তেমন দেখা পাওয়া যায় না।
আমার ফুফুর নাম শেফালী।সে সবাইকে বলে বেড়ান তাকে শেফা ডাকতে। শেফালী নাকি হিন্দুয়ানী নাম। ফুফু খুব ই ধর্ম কর্ম করেন। বাহিরে গেলে বোকরার পাশাপাশি মোজা ও পড়েন। সন্ধ্যায় যখন সিরিয়াল দেখেন তখন প্রায় কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যান৷ইদানিং রোজ বিকেলে কোথায় যেন যাচ্ছেন। কেউ জিজ্ঞেস করলে কিছু বলেন না। তবে আমি জানি কোথায় যান৷ আমি ও বলব না।
বিকেলের দিকে ফিজিক্সের দ্বিতীয় পত্রটা নিয়ে ছাদের দোলনায় দোল খেতে খেতে ব্যা ব্যা করে পড়ছিলাম। সেই সময় নিচে তাকিয়ে দেখলাম ফুফু হেসে হেসে ফোনে কথা বলছেন৷ ফোনে কথা বলার সময় প্রায় ওনার মুখ হাসি হাসি থাকে।কারন টা আমি জানি। কিন্তু মুখ বন্ধ রাখতে হবে৷ মুখ বন্ধ রাখার জন্য প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকা করে পাচ্ছি।আমি যখন ফুফুকে নজর রাখছিলাম ঠিক তখন চিলেকোঠার ঘর থেকে আমার ডাক আসলো।
-এই অন্তু। শুনে যা তো।
আমি তাকালাম। তন্ময় মামা ডাকছেন৷ তন্ময় মামার বয়স ২৮ বা ৩০ হবে৷ আমি ঠিক বুঝি না ওনার বয়সটা । মাঝে মাঝে ওনাকে কিশোর বালক মনে হয় কখনো বুইড়া। গায়ের রঙ কালো। কুচকুচে কালো না, বিয়ের পাত্রী হলে শ্যামলা বলে চালিয়ে দেওয়া যেত। বেশ লম্বা চওড়া৷ মুখে ঘন দাড়ি৷ মাঝে মধ্যে খালি শরীর হলে বুকের পশম দেখে আৎকে উঠতে হয়৷ মনে হয় কালা বান্দরের চামড়া কেটে বুকে বসানো। তবে মানুষটা দেখতে সুন্দর৷ এত সুন্দর যে ওনার কন্ঠ শুনলে আমি শিহরিত হয়ে যায়। এই যে ওনি নাম ধরে ডাকলেন এতে আমার ভেতরে এক প্রকার ঝড় বয়ে গেল। আমি সেই ঝড়ে নীড় হারা পাখির মত ছটফট না করে নিজেকে শান্ত করে ওনার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমাকে দেখে খুব স্বাভাবিক ভাবে ই টাকা চায়লো
-তর কাছে টাকা হবে?
তন্ময় মামা আমার কাছ থেকে প্রায় ধার করেন৷ যদি ও আজ অবধি ফেরত দেননি৷ তবে বলেছেন, জব হলে ই ফেরত দিবেন। হিসেব করে রাখতে৷
আমি পকেট থেকে পাঁচশ টাকার নোটটা দিয়ে বললাম
-এতটুকুই আছে।
ওনি টাকা নিলেন আর বললেন
-হিসেব করে রাখিস৷ জব হলে ই ফেরত দিয়ে দিব
আমি মুচকি হাসলাম। ওনি হেটে চলে গেলেন। আমি ধীরে ধীরে ওনার বিছানার উপরে রাখা টি শার্টটা নিলাম। ভেতরে অদ্ভুত মাদকতা৷ আমি টি শার্টটার ঘ্রাণ নিলাম। বুকে জড়িয়ে ধরে নিশ্বাস টেনে নিলাম। অনুভবে তাকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করলাম।
হ্যা। আমি ভালবাসি৷ এই মানুষটাকে ভয়ানক ভালবাসি৷ আকাশ আর জমিনের মধ্যকার সবটুকু শূণ্য জায়গা পূরণ করে দিতে পারে ওনার প্রতি আমার ভালবাসা৷ কিন্তু আমি বলতে পারব না। বলার মত কথা না। শুধু নিজেকে সামলে রেখে চলতে হয়।
সন্ধ্যায় পড়তে ভাল লাগে না৷ নিলয়দের সাথে ঘুরাঘুরি করে রাত নয়টায় বাড়ি ফিরে দেখি বাড়ি ভর্তি মেহমান। আমি চাচ্ছিলাম পালিয়ে দু তলায় উঠে যায়৷ কিন্তু বড় চাচ্চু চিৎকার করে উঠল৷
-কিরে হারামজাদা, এখন তর আসার সময় হল।
এমনিতেই বড় চাচ্চুকে দেখলে আমার বাথরুম পেয়ে যায়(ছোটটা)। তারুপরে এতগুলো মানুষের সামনে চিৎকার শুনে তো ভয়ে কলিজা বের হয়ে আসার উপক্রম।
কাঁপতে কাঁপতে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।চাচ্চু হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলল
-গোল্ড লিফ নিয়ে আয় দু প্যাকেট,আর হারাণ শেখের দোকান থেকে ভাল দেখে আইসক্রিম আনবি চার লিটার।
এক দিকে প্রসাবের প্রেসার অন্য দিকে চাচ্চুর অর্ডার। আমার বাপকে দেখলাম এক কোণায় দাঁড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে।
বাহিরে বের হয়ে গেইটের বা পাশের ড্রেনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুত্র বিসর্জন করে জিপার টানতে গিয়ে দেকি তন্ময় মামা। ওনাকে দেখে আরো ক্লান্ত হয়ে গেলাম।
মনে হয় রিকশা ভাড়া ছিল না। হেঁটে এসেছে। শার্টের সব কয়টা বোতাম খোলা। ঘেমে আছে। রাস্তার নিয়ন লাইটের আলোয়ে পশমে লেগে থাকা ঘাম চিকচিক করছে। খোচা খোচা দাড়ি আর সুঠাম বুক।যে কোন নারীর অথবা আমার মত ছেলেকে ক্লান্ত করে দেওয়ার মত অবয়ব। আমি তাকে দেখে ও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলাম সেই সময় তিনি আমাকে দেখে ডাক দিলেন
-ঐ বাবু (অনেক সময় বাবু ডাকেন,কখন বুঝি না। কিন্তু ডাকেন)
আমি মুচকি হেসে এগিয়ে যেতেই বুক ভরে তার শরীরের ঘ্রাণ নিলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। ইচ্ছে হলে বুকটাতে একটু ছোঁয়ে দেখি অথবা মসৃণ পেটে হাত রাখি।
-কয় যাচ্ছিস?
-বাসায় মেহমান। আইসক্রিম আনতে যাচ্ছি আর সিগারেট ।
-যা, দ্রুত আসবি। কথা আছে। জরুরি কথা।
আমি চলে গেলাম। জানি জরুরি কোন কথা নেই। গেলে আমাকে বসিয়ে রেখে নিজে পড়বে৷ তার নাকি একা পড়তে ভাল লাগে না। অথচ ওনার সামনে আমার পড়া হয় না।ওনি যখন পড়েন আমি তখন ওনাকে তাকিয়ে দেখি৷ সব ভুলে ওনাকে ই দেখি।
হঠাৎ করেই ফুফুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। অথচ আমি কিছু ই জানি৷ রাতে বাসায় এসে দেখি মেহমান সব চলে গেল। বড় চাচ্চু, আব্বু,আম্মু,বড় আম্মু, সবাই খুব খুশি৷ শুধু ফুফুকে দেখলাম মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
রাতে খাওয়ার শেষে,সবাই মিটিং নিয়ে বসেছে বড় চাচ্চুর রুমে৷ আমি ফুফুর রুমে পা উপরে তুলে কানে হেডফোন লাগিয়ে হিন্দি গান শুনছিলাম। (ফোন আমার না। আমাকে ফোন দেয়নি। এটা ফুফুর সিক্রেট ফোন) এমন সময় ফুফু এসে পাশে বসতে বসতে বলল
-তন্ময় ভাই কইরে?
-আমি কেমনে কমু? তুমি গিয়ে দেখো। রুমে ই তো।
-একটা কাজ করে দিতে পারবি?
-কী কাজ?
-এই চিঠিটা খুব সাবধানে তন্ময় ভাইকে দিবি৷আর বলবি দ্রুত পড়ে আমাকে উত্তর দিতে। আর এই নে এক হাজার টাকা। হাত খরচ।
-এক হাজার টাকায় হবে না। পনেরশ লাগবে।
ফুফু ব্যাগ থেকে পনেরোশ টাকা দিতে দিতে বলল
-বাপ চাচার মত লোভী হয়ছস।
আমি টাকাটা নিয়ে চিঠি হাতে দৌড় দিয়ে ছাদে উঠে গেলাম। ছাদে উঠতেই দেখে তন্ময় মামা দোলনায় বসে সিগারেট ফোকছে। তামিল হিরুর মত লাগছিল লুঙ্গিতে তাকে। আমি কাছে গিয়ে চিঠিটা দিয়ে বললাম
-ফুফু দিল।
সে, সে দিকে না তাকিয়ে বলল
-অন্তু, তর ফুফুর বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনলাম।
-হ্যা৷
-বেশ ভাল ই হয়েছে৷ কি বলিস? অনেক দিন ভাল মন্দ খাওয়া যাবে৷
তা চিঠি লিখল কেন?
-আমি জানি না৷ বলেছে চিঠি পড়ে উত্তর না দিলে ও চলবে৷
-তাহলে আর পড়ে কি হবে? জানি ই তো একি ঘ্যান ঘ্যান। বজ্জাত মাইয়া।
বলেই চিঠির খামের এক কোণায় সিগারেট ধরিয়ে দিল৷ ক্ষয়ে ক্ষয়ে চিঠি জ্বলতে লাগল। ঠোটে সেগারেট,হাতে পোড়ন্ত খাম আর দোলনায় বসা আমার রাজপুত্র৷ ভেতরটা চিন চিন করে উঠল ভালবাসায়৷ ইচ্ছে হল এখন ই একটা ভুল করে ফেলি। মস্ত বড় কোন ভুল৷
পাড়াত,অন্য পাড়ার, কলেজ মোড়ের অনেক ছেলে নিজেকে ফুফুর প্রেমিক দাবি করে আমার কাছে ফুফুর সাথে শেষবার দেখা করতে চায়ল। সেই সংখ্যা সাত আটে গিয়ে ঠেকলো। ফুফুর ফোন তখন আমার হাতে। সীম খোলা। ফুফু ব্যস্ত, শপিং, বিউটি পার্লার আর নতুন ফোন আর সীমে স্বামীর সাথে কথা নিয়ে। তাকে খুব খুশি ই মনে হচ্ছিল।
আমি সারাদিন বড় আম্মুর পিছনে ঘুরছি৷ এই বাড়ির এক মাত্র ছেলে হিসেবে ফুফুর বিয়ের জন্য শপিং করার টাকা চেয়ে চেয়ে আমি ক্লান্ত। আব্বু,আম্মু দুজনের কাছে ব্যর্থ হয়ে বড় আম্মু ই শেষ ভরসা। বড় আম্মু দিবে কিন্তু শর্ত হচ্ছে আম্মু সাথে যাবে। কিন্তু আমি চাচ্ছি না আম্মু যাক৷ কারন আম্মুর কেনা,ঠিলেঢালা সেকেলে পোশাক পড়ে ক্যাবলা আর গ্রামের চাচাত ভাই সেজে থাকার মানে ই হয় না। আমার ইচ্ছে এবার ঢাকা গিয়ে শপিং করব। নিলয়,আবু আর সাজিদ ও যাবে।
মন খারাপ করে ছাদে বসে দোল খাই, নদীর ঘাটে বসে থাকি।
ফুফুর বিয়ের পরে এক অর্থে আরেকটু একা হয়ে যাব৷ এমনিতে ফুফুর সাথে সময় কেটে যেত।আমার ফুফু একটু বোকা টাইপের। কিন্তু আমার জন্য তার অনেক ভালবাসা৷ নিজের হাত খরচের টাকাটা পোরোটায় আমাকে দেয়। শুধু আমি মোবাইলের জন্য মন খারাপ করে থাকি বলে মোবাইল কিনে নিল।এখন ফুফুর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ফুফুর ফোন,রুম আমার হয়ে যাবে তা ঠিক কিন্তু ফুফুর শূণ্যতা আমাকে ভোগাবে।
সেদিন বিকেলে রুমে ঢুকে দেখি রুম ভর্তি শপিং ব্যাগ। আমি আম্মুকে ডাকতেই বড় ফুফু হাসতে হাসতে ভেতরে ঢুকলো।
-এই অন্তু। কি হল তুর?
-এসব কার?
-কার আবার? তর৷
-এসব কে কিনে আনল?
-কে আবার? তর ফুফা দিল৷ দেখ তো পছন্দ কিনা। নাহলে সব ফেরত যাবে।
আমি সব খোললাম। একটার চেয়ে আরেকটা সুন্দর। ফুফু কাছে এসে দাঁড়ালো।
-কিরে তর পছন্দ?
-হ্যা৷ খুব পছন্দ হয়েছে৷
-তাহলে তর ফুফাকে বল। ওনি অপেক্ষায় বসে আছে। আমি দৌড়ে ফুফুর রুমে গেলাম। ফুফা,সেখানে ই ছিল৷ আমি সালাম দিয়ে পাশে বসলাম।
আমার ফুফাটা ওয়ান ক্লাস। আমেরিকা থাকে। একটু খাটো আর কালো। দেখতে সুন্দর না হলে ও আমার ফুফুকে যে ভালবাসে সেটা বুঝা যাচ্ছিল। ভাইদের আদুরে বড় হওয়া মেয়ের জন্য এমন একটা স্বামী পাওয়া অনেক সুখের।
খুব ধুমধামে ফুফুর বিয়ে হল। বিয়েতে সবাই ছিল কিন্তু তন্ময় মামা ছিল না। সে ফিরল ফুফুর বিদায়ের পর।আমি অতি আনন্দে এ কয়দিন তার কথা ভুলে ই গিয়েছিলাম। আমি যখন বন্ধুদের সাথে গিফট খোলছিলাম তখন খেয়াল হল সে ধীরে সুস্থ্যে হেঁটে যাচ্ছে৷ তাকে দেখে আমার মন কেমন করে উঠল। সে কি অসুস্থ?
খানিকবাদে আমি তার রুমে গেলাম।সে কাপড় না ছাড়িয়ে ই বিছানায় শোয়ে আছে৷ আমাকে আসতে দেখে উঠে বসল। ইশারায় বসতে বলল
আমি পাশে বসলাম।সে ভাল করে আমাকে দেখে বলল
-ফুফুর বিয়েতে খুব মজা হল। তাই নারে অন্তু?
আমি কিছু বলিনি।
-আমি থাকতে পারিনি।ঢাকা জবের ভাইবা ছিল।
-ঊ।
-তুকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে। বড় হয়ে গিয়েছিস৷ দাড়ি গোফ গজিয়ে গেল। অথচ এতটুকুন ছিলি যখন বুকের উপর শোয়ে থাকতি। এখন ত কাছে ই আসিস না।
আমি আৎকে উঠলাম। তন্ময় মামার মন খারাপ? ফুফুর জন্য নয়তো?
-তুমি ত আমার বারো তেরো বছরের ই বড়।
-হ্যা, এক যুগের। তর যখন তিন বছর তখন এই বাড়িতে আসি। সারাদিন পিছে পিছে ঘুরতি।
-এখনো ত ঘুরি।
-আর পারবি না। এবার যেতে হবে।
আমার মন খারাপ হয়ে গেল। সে টেবিলের খাম থেকে নোটিশটা হাতে ধরিয়ে বলল
-চট্টগ্রাম পোস্টিং।এক মাস পরে যেতে হবে।আর বেশি আসা হবে না।
আমি কিছু না বলে বের হয়ে গেলাম৷ সব সময় চায়তাম তার জব হোক৷ হতাশা দূর হয়ে যাক অথচ সময় যখন সুখের তখন ভেতর কাঁপিয়ে এত দুঃখ কেন আসছে?
নিচের রুমে বড় আম্মা খাবার নিয়ে বসা।
-এই বান্দর, তর কি খেতে হবে না? বাড়ি ভর্তি মেহমান। হা কর
আমি সে দিকে খেয়াল না করে বের হয়ে এলাম। বড় আম্মু পিছন থেকে ডাকতে লাগল
-এই অন্তু, এই। কিরে। সালমা-তর ছেলেটা সারাদিন কিছু খেল না। আর তুই৷ এ দিকে আয় ত।
আম্মুর গলা শোনা যাচ্ছে। সে ডাকছে আমায়। আমি গেইট পাড় হয়ে নদীর পাড়ের খেয়াতে গিয়ে বসলাম। ভরা বর্ষ। চারদিকে এত গরম। ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে।
অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। তন্ময়কে না দেখে খাবার মুখে রুচতো না। ছলে বাহানায় শতবার ওনার কাছে যেতাম। বড় হয়েছি ছেলের মত কিন্তু ভেতরে ওনার জন্য আলাদা টান। অন্য কোন পুরুষ বা মেয়ের প্রতি যে অনুভূতি আসেনি তারচেয়ে ও ভয়ানক অনুভূতি তার প্রতি। তার একটু স্পর্শের জন্য, একটু কন্ঠস্বর শোনার জন্য রাত জেগে অপেক্ষা করতাম তার বাড়ি ফেরার। যেই মানুষটাকে ভালবেসে বড় হয়েছি সে দূরে চলে যাবে সেই বিষয়টা ভেতর কোন ভাবে ই মেনে নিচ্ছিল না।
মেহমান সবাই চলে গিয়েছে৷ ফুফু আর ফুফা আমাদের বাসায়। আজ বাদে কাল চলে যাবে। সারাদিন রুমে শোয়ে থাকে। আমি নিলয়দের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর বড় আম্মু টেনে নিয়ে সোফাতে বসাতে বসাতে প্লেটে করে মালাই চপ দিতে দিতে বলল
-এই অন্তু নে, মিষ্টি খা। তর তন্ময় মামুর চাকরি হয়েছে। আল্লাহ আমার ডাক শুনেছে।
আমি মিষ্টি মুখে দিয়ে বললাম
-তোমায় কে ডাকতে বলেছিল (ধীর শব্দে)
-কী বললি?
-কিছু না। মিষ্টি আর খাব না। গরম লাগছে। গোসল দিব
ছাদে আসলাম। আকাশ মেঘলা। গায়ের জামাটা খোলে মাথার উপর ঘুরিয়ে উপর দিকে ছুড়ে দিলাম। সেটা গিয়ে তন্ময় মামার রুমের পাশে পড়ল। ঠিক সেই সময় আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামল। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টির বিন্দু গায়ে মাখছিলাম সেই সময় তন্ময় মামা বের হয়ে এল।
-এই বাবু৷ বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে৷
-আসবে না। আপনি ও আসুন।
সে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল৷ আমি তার দিকে তাকালাম৷তার এলোমেলো চুল বেয়ে পানি পড়ছে৷ তার খালি গায়ে পশমের আবরণ। গভীর নাভী। বৃষ্টিতে ভিজে লুঙ্গি চুপসে গেছে উরুতে। বাহির আর ভেতরের ঝড় মিলেয়ে আমি একাকার। সে ধীরে গতিতে আমার কাছে আসল। আমার কি হল বুঝতে পারছিলাম না। নিশ্বাস ঘন হয়ে যাচ্ছিল৷ শীত বেড়ে যাচ্ছিল। সে আমার মুখোমুখি। দুজন ই নিরব। আকাশে বৃষ্টির মাদল। আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম। তার কোমরে শক্ত করে ধরলাম। তার দু হাত ছাড়ানো। আমি তার বুকে মাথা রাখলাম। তার হৃদপিন্ড ঢোল পিঠাচ্ছিল।তারপর সেই মহা ভুলটা করে ফেললাম। তার সম্মতি ছিল কিনা জানি না। কিন্তু পা উপরে তুলে তার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিলাম। প্রথমে সে সারা দেয়নি কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে পাগলের মত চুমু খেল। আমার ঠোট, শরীর সব ছিল তার অধিনে। সে আমার ঠোট,গাল,গলা আর কপালে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছিল৷ অনেক দিন পর ক্ষুধার্ত পাখিকে খাবার দিলে যেমন ছটফট করে তদ্রুপ ছটফটানি ছিল। এক পর্যায়ে সে আমায় জড়িয়ে ধরে উপরে তুলে দিলে নিল। কুলে করে তার রুমের দিকে নিয়ে গেল। আমি তখন নিয়ন্ত্রণহীন৷ তার প্রেমের প্রতাপে ভয়াল হয়ে আছি। সে আমাকে তার বিছানায় শোয়ে দিল। আমি দু হাতে তাকে কাছে টানলাম। সে আমার নাভীতে চুমু খেল৷ আমি শিহরিত হয়ে উঠলাম। তারপর আমার সদ্য গজে উঠা বুকের পশমে আলতো করে চুমু খেল। আমি মুর্ছিত হয়ে তার মাথা জড়িয়ে ধরলাম।সে ধীর হাতে আমার শর্টস খোলে নিয়ে আমার উরুতে চুমু খেতে খেতে উপর দিকে আগাচ্ছিল৷ আমি সুখে কাতরাচ্ছিলাম।
একটা সময় আমি তা লুঙ্গির গিট খোলে দেখতে লাগলাম তাকে।সে তখন আমার নিচে। আর আমি উপরে। তার চোখ তৃষ্ণাক্ত কাকের চোখের মত। তার সম্পুর্ণ শরীর আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল। আমি তাকে সুখ দেওয়ার জন্য তার পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলাম৷সে সুখে চোখ বন্ধ করে নিল।
আমি সেই চোখে চুমু খেয়ে তাকে আশ্বস্ত করলাম। এর পর যা হবে তা উভয়ের সম্মতিতে ই।
ভালবাসার অনুভূতি সব সময় সুখের হয় না। জীবনে প্রথম কোন পুরুষের শরীর নিজের ভেতরে প্রবেশ করানো অনুভূতি সুখকর না হলে ও আমি সুখ পেয়েছিলাম। ভুলে গিয়েছিলাম সমাজ,ধর্ম, সম্পর্ক। মনে হয়েছিল শুধু তাকে আমার চাই ই চাই। আর পেয়েছি ও।
এই ঘটনার পর আমি আরো পাগল হয়ে গেলাম তন্ময়ের প্রতি৷ সারাক্ষণ ই একজন আরেকজনকে ঘেষে আছি। মনে হচ্ছিল আমাদের সময় খুব কম। এই অল্প সময়ে যদি ভালবাসতে না পারি তবে আর কখনো পারব না।
সেদিন বিকেলে দোলনায় তন্ময় মামুর কোলে মাথা রেখে গান শুনছিলাম তখন সে বলল
-তুই আমায় মামু ডাকিস না।
-কী ডাকব?
-নাম ধরে ডাকবি।
-ধুর, লোকে কি বলবে?
-লোকের সামনে ডাকিস না। তাহলে ই তো হবে।
আমি তাকে নাম ধরে ই ডাকি। নাম ধরে ডাকতে ই মনে হয় মানুষটা আমার আপন।
ঐদিন তার উপর শোয়ে শোয়ে বলছিলাম
-তুমি কিন্তু একবার ও বলুনি যে আমাকে ভালবাস
-ভালবাসা বলতে হয় না। বুঝাতে হয়।
-তুমি বুঝিয়েছ?
-হ্যা। অসংখ্যবার। কিন্তু তুই পাগল। বুঝিস নি।
-কীভাবে?
-এই যে সারাক্ষণ তুকে ডাকতাম,রুমে এনে বসিয়ে রাখতাম,নিজেদের এত বড় বাড়ি থাকতে তুদের এখানে পড়ে আছি সেটা কেবল তর জন্য।
ছোট সময় তুকে দেখার পর যখন বছর দুয়েক আগে এসে দেখি তুই এত বড় হয়ে গিয়েছিস সেদিন ই ভেতরটা তোর নামে রেজেস্ট্রি হয়ে যায়। অদ্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম। তাই বলতে পারিনি কিছু। কিন্তু তোর ভালবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখন আর পারব না ছেড়ে থাকতে।
একটা মাস চোখের পলকে চলে গেল। আগামীকাল সে চলে যাবে সামনে আমার টেস্ট এক্সাম। অথচ পড়ায় মন বসছে না। সারাক্ষণ তার কাছে যেতে মন চাচ্ছে। যেতে পারছি না। বড় আম্মু বই দিয়ে বসিয়ে রাখে। সে শত বাহানায় আমার রুমে আসে। তার চোখের ছটফটানো আমার ভেতর নাড়িয়ে দিচ্ছিল। যেদিন সে চলে যাবে সেদিন বড় আম্মু আসলো আমার সাথে থাকতে।আমি রুম থেকে বের হতে পারছি না। অথচ এই শেষ রাত্রটা তার সাথে থাকার ইচ্ছে ছিল।
পরের দিন সকালে সে সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে এল। আমি তখন ও পড়ায় বসা। শুধু এতটুকু বলেছিলাম
-আমি এগিয়ে দিয়ে আসি?
তন্ময় ও বলেছিল
- ও আসুক একটু।
বড় আম্মু ধমক দিয়ে ভেতরে ঢুকয়ে দিল। আমার রাগ, অভিমান আর কষ্টে হাত পা কাঁপতে লাগলো। ঠিক সেই সময় বড় চাচ্চু ডাক দিল
-এই অন্তু এদিকে আয়।
আমি চোখ মুছে বের হলাম
-যা। ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে ই চলে আসবি। আড্ডা দিবি না।
আমি হেসে উঠলাম।
আমি দৌড়ে বের হতে গিয়ে দরজায় ধাক্কা খেলাম। বের হতে গিয়ে দেখি সে দাঁড়িয়ে৷ তার চোখ ছলছল। আমি ডান বাম না দেখে তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠোকরে কেঁদে দিলাম।সে তার কন্না জড়িত ভাঙ্গা কন্ঠে আমাকে শান্ত করতে চায়ল।।
ট্রেন ছাড়ার আগে সে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল
-ভালবাসি অন্তু৷ খুব ভালবাসি৷ আমি আমার সারাটা জীবন তোমার সাথে কাটাতে চাই।
আমার কান্নার ঝড় উঠল। কিছু বলতে পারিনি৷সে দৌড়ে ট্রেনে উঠল। ট্রেন ঝকঝক শব্দে চলে যাচ্ছে৷ আর সেই শব্দে মিশে যাচ্ছে আমার কান্নার শব্দ।
সারাদিন সেই জায়গায় ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমি কি তাকে হারিয়ে ফেলব? তাকে ছাড়া কীভাবে থাকব? তার স্পর্শ, আদর,ঘ্রাণ,কন্ঠস্বর আর তার ভালবাসা ছাড়া কীভাবে থাকব?
সন্ধ্যা যখন হল তখন আব্বু আর চাচ্ছু এসে আমার সামনে দাঁড়াল।
-কিরে হারামজাদা.....
সে কথাটা বলার আগে ই আমি তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম।
এখন রাত দুইটা৷ আমি তার রুমে শোয়ে আছি। আমার হাতে তার রেখে যাওয়া টি শার্ট৷মনে মনে ইশ্বরকে ডাকছি। ইশ্বর কি শুনবে আমার ডাক?
.............(চলবে)
প্রতীক্ষিয়া
Reviewed by সমপ্রেমের গল্প
on
January 10, 2021
Rating:
অবশ্যই চলবে
ReplyDelete