কারাবাসী
আরভান শান আরাফ
ঝগড়াটা বাধল গতকাল বিকেলে৷ আমরা তখন নদীর পাড়ে বসে বলিউডের নায়কদের নিয়ে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত৷ আমি, সৌমিক,নিতাই দা,আবির আর সুমন৷ঝগড়ার স্বর শোনার পর আর কেউ না গেলে ও আমি আর সুমন দা নিয়ে দিলাম দৌড়।
সারা সন্ধ্যা ঝগড়া হল।বিশ পঁচিশ জনের মত আহত হল৷এর মধ্যে পুলিশ ছিল চার জন।। সেদিন রাতে ই পুলিশ যাকে পেয়েছে ধরে নিয়ে গেছে৷ আমি আর সুমন পুলিশের হাত থাকে বাঁচার জন্য গা ঢাকা দিলাম।
সপ্তাহ দশেক আত্মীয়দের বাড়িতে ঘুরার পর এক সময় নিজে ই গ্রামে ফিরে এলাম। গ্রাম তখন প্রায় পুরুষ শূণ্য।অর্ধেক পলাতক,বাকি অর্ধেক জেলে৷বাসায় কেবল আম্মু আর আপু। বাবা অনেক আগ থেকে ব্যবসার কাজে ঢাকা৷ ঝামেলা না থাকলে চলে আসত। দুলা ভাই ও আসতে পারছে না আপুকে নিতে।
অবস্থা বেগতিক দেখে ঝুঁকি নিয়ে আমি ই চলে এসেছি। রাত হলে পুলিশ আসে। তাই মসজিদে গিয়ে ঘুমাই।
সামনে অনার্সের ফাইনাল।খুব পড়া দরকার৷ অথচ একদিনের ঝগড়ায় এক মাস ধরে ভোগছি। দুই গ্রামের লোক ই পলাতক।
সেদিন সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরছিলাম।ঘাট পাড় হয়ে মসজিদে যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে পুলিশের হাতে ধরা পড়লাম।ঝগড়ার এক মাস পড়ে ধরা পড়ার আনন্দটা খুব সুখের ছিল না৷ সুমন ধরা পড়েনি অথচ আমি ধরা পড়ে গেলাম। মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার কথা থাকলে ও পড়েনি। নিজেকে আশ্বস্ত করলাম এটা ভেবে যে,কম বেশি সবাই জেলে৷ আমি ঝগড়া করে জেলে যাচ্ছি, আর বাকি অর্ধেক ঝগড়া না করে।
জেলে মোটামুটি এলাকার সবাই ই ছিল।আবির,নিতাই দা,সৌমিক,জুলহাস, কাকারা সবাই জেলে।আমাকে পেয়ে যেন তারা আরো খুশি। আমি ও খুশি। বাড়িতে নিজেকে সদকার ছাগল মনে হত। সারাদিন একা একা ঘুরে মসজিদে গিয়ে ঘুমাতাম। তখন সারাদিন জেলে ঘুরে ফিরে রাতে সেলে একেক জন একেক জায়গায় ঘুমাতাম৷ তাস,দাবা,লুডু খেলে যখন সময় কাটত তখন ই আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেল।
ঐদিন সকাল থেকে ই মনে অশান্তি। বাড়ির কথা ভেবে মন কেমন করে উঠছিল।জেলের বা দিকে একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল। আমি সেখানে বসে ছিলাম। হঠাৎ চোখ গেল পাশের কতগুলা লোকের দিকে। তাদের ভিড়ে পনেরো ষোল বছরের একটা ছেলে।
কী বিষয় নিয়ে যেন তারা প্রচন্ড হাসাহাসি করছিল৷ আমার দৃষ্টি আটকে গেল ছেলেটার দিকে৷ এই বিষণ্ণতম দিনগুলোতে কেউ এমন প্রাণ খোলে হাসতে পারে তা আমার জানা ছিল না। আমার চোখ ছেলেটার দিকে। ওর প্রাণ খোলা হাসিতে আমার মনের অশান্তি দূর হয়ে গেল।
এই দিনের পর আমি সারাক্ষণ ওকে খেয়াল করতাম। আমি ভাবতাম, এত সুন্দর একটা ছেলে, এত প্রাণচঞ্চল, এত মুগ্ধতা যার মধ্যে সে কেন জেলে আসবে?
দু তিনদিন রাতে ঘুম হয়নি। সারাক্ষণ ছটফট করতাম।সকাল হতে না হতে ই বের হয়ে যেতাম। ওর সেলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম৷ ও বের হলে ওকে তাকিয়ে দেখতাম৷ মন আরো গম্ভীর হয়ে যেত। ইচ্ছে হত ছুটে যেতে। অথবা এভাবেই তাকিয়ে থাকতে৷ জীবনে কখনো যা হয়নি তা হচ্ছিল।
সকালের নাস্তায় আলু ভর্তা আর রুটি। সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার আনত। আমি কিনে খেতাম। জেলের হোটেল থেকে। ছেলেটাকে দেখতাম খুব তৃপ্তির সাথে আলু ভর্তা দিয়ে রুটি খাচ্ছে। আমার ইচ্ছে হত ওকে ডেকে আমার পাশে বসিয়ে ভাল কিছু খাওয়ায়৷ ওর ছলছল চোখ, সরু চিবুক, হুট করে যৌবনে পা রাখা মুগ্ধকর অবয়ব আমাকে কেন যেন আটকে দিত। আমি বারবার ব্যর্থ হতাম।
সেদিন আব্বু এসেছিল আমাকে দেখতে। দেখতে এসে আমাকে আশ্বস্ত করার জন্য বলল যে, দ্রুত ই জামিনে বের হতে পারব। কিছুদিন আগে ও আব্বু কে কেঁদে কেটে বলতাম আমাকে বের করার জন্য অথচ আজকে মনে হচ্ছে থেকে যাই সারা জীবন জেলে৷ বের হলে ই ওকে হারিয়ে ফেলব৷ আর খোঁজে পাব না। আমি ওর চোখের দিকে না তাকিয়ে হয়ত থাকতে পারব না। আমার মন কেমন করে উঠল৷ আমি আব্বুকে বললাম।
-আপনি এত ব্যস্ত হবেন না৷ বের হলে এক সাথে ই হব৷। আব্বু আমার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল। ঘটনা বুঝার আগে ই সময় শেষ হয়ে গেল৷
দুপুরের দিকে গোসল করতে ধাক্কাধাক্কি লেগে যায়৷ তাই আমি সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে গোসল সেরে ফেলি।আজ কল তলায় যেতে ই দেখলাম
ও বালতিতে পানি ভরছে। আমাকে দেখে আড়ষ্ট হয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে গেল। আমি ধীর পায়ে ওর পাশে দাঁড়িয়ে বললাম
-গোসল দিবে?
সে আমার দিকে তাকিয়ে যখন দেখল আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি তখন দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল। তারপর অনেকটা জড়তা নিয়ে ই বলল
-না,রান্নার জন্য পানি।
-অ..তুমি বাবুর্চিদের সাহায্য কর?
-জ্বি না! আমাকে আজ পানি নিতে পাঠাল।
সে পানি নিয়ে চলে গেল। আমি খুশি হলাম। প্রথম কথা। এর পর হয়ত আরো কথা হবে।
আমার দুর্ভাগ্য নাকি সুভাগ্য তা বুঝা গেল না৷ এর পরের দিন আমাদের কোর্টে হাজির করা হল আর আমরা প্রায় সবাই মুক্ত হয়ে গেলাম।
এলাকায় আসার পর উৎসব শুরু হয়ে গেল। চাঁদা তুলে বারোটা মহিষ এনে যাদের সাথে ঝগড়া হয়েছিল তাদের গ্রাম আর আমাদের গ্রামের মধ্যে বিশাল খাওয়া,দাওয়ার আয়োজন হল।সারা রাত জেগে যাত্রা পালার নাচ, খাওয়া দাওয়া,রঙ খেলা আর খেলাধুলার প্রতিযোগিতা নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে গেল। যে ছেলেটাকে দা দিয়ে কুপাতে গিয়েছিলাম তার সাথে ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল৷দারুন ছেলে।প্রচুর হাসাতে পারে।ওকে আমরা জব্বর বলে ডাকতাম৷ যদিও ওর নাম ছিল জহিরুল।
জীবন যখন আপন গতিতে চলে যাচ্ছিল তখন মাঝে মধ্যে রাতের আধারে ছেলেটার কথা মনে হত। ওর হাসি,চোখ,জড়তা,শরীর, ঠোট৷ আমি ওর বয়সী অন্য কোন ছেলে দেখলে তাকিয়ে থাকতাম কামুক নজরে।রাত হলে ছটফট করতাম একটা শরীরের জন্য।
এর মধ্যে ই কথিত প্রেমিকা রেশমার সাথে একদিন মিলিত হলাম। যৌনতার ডাকে সাড়া দিয়ে একদিন যখন রেশমার বাসার সবাই আত্মীয়ের বাড়িতে গেল তখন সৌমিককে পাহারায় রেখে রেশমার ঘরে ঢুকলাম। অন্ধকার ঘর, চাঁদের আলো ঘরে ঢুকছে টিনের ছিদ্র দিয়ে। সেই আলোতে রেশমার নাভী, ওর ঠোঁট সব কিছু আমার ঐ ছেলেটার মত মনে হচ্ছিল।বারবার মনে হচ্ছিল, যার শরীরে লেপ্টে আছি সেটা রেশমা নয়। সেটা সে৷ যার কথা ভাবলে আমার যৌনতার চেয়ে অধিক ভেতর কাঁপে প্রেমে। সুখে রেশমা যখন ছটফটাচ্ছিল তখন আমার মন অকারণে ই বিষাদগ্রস্ত হয়ে গেল। মনে হল, আমি অন্যায় কিছু করছি৷ আমার সব কিছু ওর, যাকে আমি ভালবাসি৷ ঐ বালককে আমার খোঁজে বের করতে হবে৷ আমি আমার সব কিছু ওকে সঁপে দিব।
ছুটে বের হয়ে এলাম। রেশমা অপ্রস্তুত ছিল। সে কিছু বুঝে উঠার আগে ই আমি রাস্তায়। আমার সেদিন চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল খুব বড় ভুল করে ফেলেছি। এত আবেগ, এত প্রেম এর আগে আমি কখনো ফিল করিনি। তা ও একটা ছেলের জন্য৷ সৌমিক পিছে পিছে আসছিল। আমি ওর সাথে কথা বলতে ও অপ্রস্তুত ছিলাম।
জহিরুলের বোনের শুশ্বড় বাড়ি বাসুদেবপুর। একদিন হুট করে ই বলল চল ঘুরে আসি। আমার অনার্সের ফাইনাল শেষ।চাকরি বাকরি করার ইচ্ছে নেই৷বাসায় সারাদিন বসে থাকি৷ ঘুরিফিরি। ত্যাক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম, যাই ঘুরে ই আসি। ব্যাগ গুছিয়ে ছুটলাম বাসুদেবের পথে৷
যেমন ভেবেছিলাম তেমন না, এর চেয়ে ও বেশ ভাল মানুষ তারা।আমাকে আর জহিরুল কে থাকতে দিল মাটির ঘরে। বেশ গোছানো একটা ঘর৷ বাঁশ দিয়ে বানানো খাট। মাটির কলসিতে পানি ভরা। নিচে পাটের কার্পেট বিছানো। পল্লীবিদ্যুৎ,সারা রাত কারেন্ট থাকে না। জানালা খোলে দিলে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে।রাতে চমৎকার ঘুম হল।
সকালে ডেকে তুলল জহিরুল। আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা। আমি চোখ বন্ধ করে ই বললাম
-আরেকটু ঘুমাতে দে।
-আরে শালা উঠ। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আমি উঠে বসলাম।কোনমতে চোখ খোলে হাতে ছাই নিয়ে পুকুর পাড়ে যাওয়ার পর পর ই আমার জীবনের সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনাটা ঘটল।প্রথমে মনে হচ্ছিল, আমি স্বপ্ন দেখছি অথবা ঘুমে ই আছি।পরক্ষণে উপলব্ধি করলাম, নাহ! আমি জেগে আছি। আর সব বাস্তব। যার জন্য এত ছটফট করতাম৷ যাকে স্পর্শ করতে মন কেমন করে উঠত৷ যাকে একবার দেখে ভালবেসে সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে চাচ্ছি সেই তরুন আজ আমার সামনে। আমি যখন পুকুরের এই পাড়ে তখন সে ঐ পাড়ে গাছ তলায় বসে কিছু একটা পড়া নিয়ে ব্যস্ত। তার পড়নে সাদা ধবধবে টি শার্ট আর চোখে চশমা৷ ছোট ছোট দাড়ি গোফ,চমৎকার চোখ আর সরু নাকে তাকে অপূর্ব লাগছিল৷ আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।
দুপুরের দিকে বাহানা করে জহিরুলকে নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরলাম তাকে খোঁজার জন্য। তখন দেখা পায়নি। দেখা হয়েছে ঐ দিন সন্ধ্যার পরে গানের আসরে।
গ্রামে গানের আয়োজন হল। শামছু বয়াতির গান৷ নারী পুরুষ দল বেধে যাচ্ছে৷ আমরা ও গেলাম গান শুনতে। লোকজনকে ডিঙ্গিয়ে একদম সামনে গিয়ে বসলাম। আগে পিছে বা ডানে বামে কে আছে সে খেয়াল না করে চুপ করে বসে গেলাম গান শুনতে। বয়াতি যখন গানে টান দিল আমি তখন বাম দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। মশালের আলোয়ে যার চেহারা দেখা যাচ্ছে সে আর কেউ নয়, যার জন্য এত ছটফটানি সে মানুষটা৷ আমার ভেতরে ঝড় উঠল।
বয়াতি গান ধরল। আমার সেদিকে খেয়াল নেই৷ আমি তাকিয়ে দেখছি ওকে।তার সকল চিন্তা গানের দিকে৷ আমার চিন্তা তার সম্পূর্ণ অবয়বের দিকে। মনে কেমন গম্ভীর চাহিদা, কাছে পাওয়ার তীব্র বাসনা৷ ইচ্ছে করছিল আমি তার হাতটা ধরি৷ একবার জড়িয়ে ধরি বুকে৷ একবার চুমু খাই ওর কপালে। একবার দেখি ওর খালি শরীর। হাত রাখি ওর কোমড়ে। আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটা হাত ওর উরুতে রাখলাম৷ সে ফিরে তাকালো। আমি মুচকি হেসে কিছু বলতে যাব তখন সে আমার হাতটা টেনে বাহিরের দিকে যেতে ইশারা করল৷ আমি ওর কথা মত বাহিরের দিকে হাঁটতে লাগলাম। জহিরুল তখন গান শুনছে। ছেলেটা সামনে আর আমি তাকে অনুসরণ করে পিছনে। লোক সমাগম আর গানের শব্দ যেখানে নেই সেখানে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার মন তখন কেমন করছিল। সে আমার দিকে মুচকি হেসে বলল
-কেমন আছেন আপনি? জেল থেকে কবে ছাড়া পেলেন?
আমি কিছু না বলে তাকিয়ে ই রইলাম। সে আবার বলল
-আজকে আপনাকে দেখে ই চিনে ফেলেছি৷বিকেলে দেখেছিলাম জহির বিয়াইয়ের সাথে।
আমি আশ্বস্ত হলাম এইভেবে যে সে জহিরের আত্মীয়।
আমি কোন কথা না বলে তাকে জড়িয়ে ধরলাম৷ আকস্মিক জড়িয়ে ধরায় সে কি করবে তা বুঝতে না পেরে পাথরের মত শক্ত হয়ে গেল।
-আরে ভাই। কি হল?
আমার চোখে পানি। কথা বললে ই কেঁদে দিব। বুকে ভয়াল ঝড়।কেমন যেন লাগছিল।আমি কোন কিছুর উত্তর না দিয়ে চলে যেতে লাগলাম। কিছু দূর হাঁটার পর মনে হল সে আমার পিছন পিছন আসছে৷ আমি নিজেকে প্রস্তুত করে দাঁড়ালাম।সে কাছে আসতে ই টেনে ওর হাতটা ধরে বললাম
-তোমার নাম কী?
সে অবাক হল।মুচকি হেসে উত্তর দিল
-এটা কেমন কথা? আপনি আমার নাম জানেন না৷ জেলে তো খুব নজর রাখতেন৷ নামটা জেনে নিতে পারেন নি?
-না।পারিনি। এবার বলো
-সুফল। আমার নাম সুফল।
-ও! আচ্ছা
-আমি কিন্তু আপনার নাম জানি। আপনি আশিকুর রহমান
আমি অবাক হলাম। ও কি আমাকে চিনে?
-তুমি চিন আমাকে?
-হ্যা চিনি। আপনাদের ঝগড়ার কারনে আমাকে ও যে জেলে যেতে হয়েছিল৷
আমি পরপর বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম
-তুমি কেন জেলে গেলে? কী হয়েছিল?
-বেড়াতে গিয়েছিলাম।ঢাকা থেকে সোজা বোনের বাসায়৷ আর সেদিন রাতে ই জেলে।
-তোমার বাড়ি এই গ্রামে?
-না। এখানে আমার ফুফুর বাড়ি। আমি ঢাকায় থাকি৷ আপনাকে প্রথম জেলে দেখি। পরে জহির বিয়াই বলল সব কথা৷ কেন জেলে গেলেন এই সব৷
দুজন হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি অবধি চলে এলাম। অনেক কথা বলার ছিল৷ সব বলা হল। ভেতরটা বারবার ওকে ছোঁতে চাইলো। কিন্তু কিসে যেন আটকে যেতাম বারবার।
জীবন বহমান নদীর মত৷ জেলে যাকে দেখে প্রথম নিজেকে বুঝতে শিখেছিলাম সেই মানুষটার সাথে দেখা হল একটা বছর পর। কিন্তু পরের দিন সকালে ই বাসা থেকে খবর গেল বাবা অসুস্থ্য। সারা রাত নির্ঘুম। কিছু না বলে ই বাড়িতে ফিরে এলাম। বাসায় এসে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল৷ বাবা মা আর আপু মিলে বউ দেখেছিল৷ আমি তখন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু আজকে বাসায় এসে শুনি মেয়ে পক্ষের লোক আসবে আমাকে দেখতে৷ আমি নিজেকে উদভ্রান্তের মত আবিষ্কার করলাম। সারাক্ষণ মনে হতে লাগল, কিছু ভুল হচ্ছে৷ সংসার আমার জন্য না৷ একটা মেয়েকে নিয়ে সুখি হতে পারব না৷ আমার সুফলকে ই লাগবে৷ মাথায় অদ্ভুত রকম টানাটানি।
সন্ধ্যার দিকে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন৷ মেয়ের বাড়ির মানুষ সবে বিদায় নিল। আমি তখন সোফাতে পা ছড়িয়ে উদাস মনে বসে আছি। ঠিক তখন সেই ফোন। রিসিভ করতেই, ভেতর কাঁপিয়ে সেই কন্ঠস্বর
-আশিক ভাইয়া?
আমার কান জুড়িয়ে গেল তার কন্ঠস্বরে। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এনে উত্তর দিলান
-সুফল? তুমি?
-হ্যা আমি। না বলে চলে গেলেন যে।
-আর বলো না৷ ঝামেলায় পড়ে গেছি। কেমন আছ?
-ভাল আছি৷ কাল চলে যাব ঢাকা।
আমার মন খারাপ হল। কেন হল জানি না। সারা রাত্রি জেগে কথা হল। এই ভাবে অনেকগুলো দিন কাটল। রাত জেগে ফোনে কথা বলি৷ বাসা থেকে বিয়ের জন্য বউ দেখছে আর আমি সব দিয়ে ওকে ভালবেসে বসে আছি।কিন্তু কাছে পাওয়া হচ্ছে না। ভালবাসি বলা হচ্ছে না। রোজ রাতে মন কেমন করতো৷ ছটফট করতাম।
এর ই মাস দেড়েক পরে উত্তর পাড়ার সাথে আবার ঝগড়া হল। কে জানি কার পায়ে থু থু ফেলেছিল। তা নিয়ে ভয়ানক ঝগড়া৷
সকালে একবার ঝগড়া করে বাড়ি ফিরে আসলাম। পায়ে ব্যথা পেয়ে ব্যান্ডেজ করে ঘরে বসে আছি৷ সে শোনলো সবটা৷ পায়ে ব্যথা পেয়েছি শুনে মন খারাপ করল।
ঐ দিন ই দুপুরের ট্রেনে সে আমার বাসায় এসে হাজির। আমি তখন কাটা পা নিয়ে বিছানায়। ওকে দেখে ই আমার মন ভরে উঠল। কাটা পা নিয়ে ই ল্যাংড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম।।
সারা বাড়ি খালি। যে যার মত পালিয়ে আছে। আমার মাথা গেল আউলিয়ে। আমি ওকে চুমু খেয়ে বসলাম। আমার প্রথম চুমুতে ও কেমন কেঁপে উঠল। ও আমার ঠোঁটে চুমু খেল। আমি তৃপ্ত হলাম। ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলাম। দুজন ই তখন পাগল। ভালবাসার মাত্রহীনতায় একে অপেরের ভেতর পারলে ঢুকে যায়।
সেই ভরদুপুরে, গ্রাম যখন পুলিশের ভয়ে পলাতক। সারা গ্রামে যখন আতঙ্ক সেই দিন আমি আর সে মিলিত হলাম। জীবনের প্রথম সুখে দুজন যখন আবেগী তার পরের দিন আবার পুলিশের হাতে ধরা পড়লাম।
তখন আমি একা ছিলাম। এবার আমার ভালবাসার মানুষটা ও সাথে ছিল৷ সারা গ্রাম সেদিন অবাক হয়ে দেখছিল, এই প্রথম কেউ খুশি মনে পুলিশের ভ্যানে চড়ে বসে আছে।মনে মনে দোয়া করছি, এবার যাবজ্জীবন হয়ে যাক। সারা জীবন সুফলের সাথে জেলে কাটিয়ে দিব।
বিয়ের প্যারা নেই, সমাজের বাধা নেই, দূরত্বের বালাই নেই।
পুলিশের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে। আমি আর সুফল পাশাপাশি বসা৷ শরীরের সাথে ঘেঁসে বসে আছি। মনে হচ্ছিল, আমি সুখি। খুব সুখি।
..............সমাপ্ত.....................
আলহামদুলিল্লাহ! বহুদিন পরে মিঠেল সমাপ্তি পেলাম
ReplyDelete