Onlyfan Premium Videos

শূণ্যস্থান-৪

                        শূন্যস্থান-৪
                  আরভান শান আরাফ

ঝড় থেমেছে মিনিট পাঁচেক আগে। গ্রাম শান্ত।চারদিকে কুটকুটে অন্ধকার আর ঝিঁঝিঁপোকার ডাক। নিবিড় মেঘনার জলে দু পা ডুবিয়ে বসে আছে।চোখে জল নেই,মুখে ভাষা নেই, নদীর মতই শান্ত। দুটা শেয়াল এদিকে ই দৌড়ে আসছিল৷ নিবিড়কে দেখে তারা ফিরে যাচ্ছে৷কিছু কিছু প্রাণী খুব অদ্ভুত, তারা দুঃখী মানুষের সংস্পর্শ খুব সাবধানে এড়িয়ে চলে৷
নিবিড় বুঝে পাচ্ছিল না সে কি করবে৷ সে কি গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে নাকি সুমনের চলে যাওয়া অবধি নিজেকে লুকিয়ে রাখবে?
সুমন কি তাকে দেখেছে? নিবিড় যখন নানান প্রশ্নে এলোমেলো ঠিক সেই সময়টাতে পিছন থেকে কেউ বলে উঠল
-এখানে বসে কেন? রাত কি হয়নি এখনো?
নিবিড় ফিরে তাকাল। মইন চৌধুরী। কিন্তু রাতের বেলা, এদিকে কেন? নিবিড় দ্বিধায় ছিল কী ব্যপারে প্রশ্ন করবে৷ অনেকটা এলোমেলো ই প্রশ্ন করল
-আরে, এদিকে? তা ও এত রাতে?
-এত রাত তো নয়৷ সবে ত আটটা বাজে৷
নিবিড় উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল
-চরাঞ্চলে রাত আটটা তো অনেক রাত। তাছাড়া আপনি তো রাধানগর যাবেন৷ এতটা পথ৷
-ওসব ভাবতে হবে না। তা দাঁড়িয়ে ই থাকব?
-আরে না, তা কেন? আসুন না৷ ভেতরে আসুন।
নিবিড় আগে আগে ঘরে ঢুকে মশালটা জ্বালিয়ে গাছের গুড়ি দিয়ে বানানো সোফার মত চেয়ারটার  দিকে ইশারা করে বসতে বলল।মইন বসতে বসতে খেয়াল করল,নিবিড়ের পাঞ্জাবি ভিজে আছে৷ তার সুঠাম শরীরে লেপ্টে আছে ভেজা পাঞ্জাবী৷ মুখে ঘন খোচা খোচা দাঁড়ি আর অসাধারণ দুটি চোখ। মইন চৌধুরির আবারো ভ্রম হল৷ মাথাটায় কেমন ভোঁ ভোঁ শব্দ হতে লাগল৷ অনেক কষ্টে সে নিজেকে সামলে বলল।
-আমি উঠি যুবা মাস্টার। কাল সকালে যাব জমি দেখতে৷
-তা তো যাবেন ই৷ চা করি৷খেয়ে যান৷
-না না, চা করতে হবে না। আচ্ছা, একটা প্রশ্ন ছিল করব?
-করুন না৷ অনুমতির কী আছে?
-তোমার নামটা জানা হল না৷
নিবিড় মুচকি হাসতে গিয়ে অট্ট হেসে গড়িয়ে পড়ার উপক্রম হল৷ নিজেকে সামলে বলল
-আপনি আমার নাম জানেন না?
মইন চৌধুরী লজ্জা পেয়ে বের হতে যাবে সেই সময় নিবিড় বলল
-আমার নাম নিবিড়।
মইন চৌধুরীর কিছু না বলে বের হয়ে গেল। তার কেমন জানি লাগছিল। ইচ্ছে করছিল আরেকটু বসতে, আরেকটু কথা বলতে৷নিজের অহেতুক এই ইচ্ছার কোন অর্থ ও সে খোঁজে পেল না।
সুমনের আজ ঘুম হল৷ মিতু খেয়াল করল,অনেকগুলো বছর বাদে সুমন ঘুমাচ্ছে৷ সেটা খুব তৃপ্রির ঘুম। আজ আর ঘুমের মধ্যে সে কারো নাম ধরে ডাকল না, ছটফট করে জেগে উঠল না, অকারণেই জেগে গিয়ে বিছানার এপাশ ওপাশ করল না। সুমন আজ খুব খুশি৷ কিন্তু কেন খুশি?সে কি তার সুখ খোঁজে পেয়েছে?
নিবিড় ঘরে ঢুকতেই খেয়াল করল খাবার নিয়ে কইতরি বসা। তার মুখ মলিন হয়ে আছে। নিবিড় মুচকি হেসে বসতে বসতে প্রশ্ন করল,
-কী হল কইতরি,মন খারাপ কেন?
কইতরি মুখ গম্ভীর রেখেই উত্তর দিল।
-বাপজান আমার বিয়া দেকতাছে।
-বিয়ে? সে ত ভাল কথা।
কইতরির মুখটা আরো গম্ভির হয়ে গেল। সে আচমকা ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময় ডঃজাবের এসে ঢুকল৷
নিবিড়ের ভেতরটা মুচড় দিয়ে উঠল। নিবিড় জাবেরের আকস্মিক আগমনের কারন না বুঝতে পেরে শূণ্য দৃষ্টিতে কইতরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়ল৷ কথা বলল জাবের।
-সরি, অনুমতি ছাড়াই চলে এসেছি। কিছু মনে করেন নি তো?
নিবিড়িরে হুঁশ এল৷ সে উঠি দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল।
-আরে না,মনে করার কী আছে? এসেছেন, খুব খুশি হয়েছি। বসুন না। দাঁড়িয়ে কেন?
জাবের না বসেই হাতের ব্যাগটা থেকে কিছু মেডিসিন বের করে বলল।
-স্কুলে গেলে এইগুলা সুমিত ভাইকে দিয়ে দিবেন। বেচারার ওয়াইফ অসুস্থ্য।
নিবিড় ঔষুধগুলো নিতে নিতে খেয়াল করল জাবের সাহেবের হাত গরম।
-এ কি, আপনার কি জ্বর নাকি?
-কিছুটা। সেরে যাবে।
-তা জ্বর এল কেন হঠাৎ?
-গতকাল সুমন ভাইকে বৃষ্টিতে ভিজে খোঁজতে হয়েছে। তাই হয়ত।
-উ!
-তুমি সুমন ভাইকে চিন?
নিবিড়ের ভেতরটা কেমন করে উঠল। আবার ঐ নামটা।
নিবিড় নিজেকে সামলে বলল।
-চলুন না,এক সাথে নাস্তা করি।
-না না, আমাকে উঠতে হবে। আসছি।
জাবের চলে গেল। নিবিড় রুটি ছিড়ে মুখে দিতেই পুরানো দিনের কথা ভেসে উঠল তার চোখে।
একদিন সন্ধ্যায় সুমন নিজ হাতে নিবিড়কে খায়য়ে দিতে দিতে বলেছিল, যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন সে নিবিড়কে নিজ হাতে খাওয়াবে। কত অদ্ভুত। মানুষটা চলে গেছে অথচ, কথা ঠিক ই রয়ে গেছে। জীবন আমাদের হারানো গল্পে বারবার  একি চরিত্রে ফিরিয়ে দিতে চায়।
পুরানো দিনের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নিবিড়ের চোখে যখন জল সেই সময় বাহির থেকে মইন চৌধুরীর কন্ঠস্বর শোনা গেল
-যুবা মাস্টার কি ভেতরে?
নিবিড় নিজেকে সামলে হাতের রুটির টুকরাটা থালায় রেখে পাঞ্জাবীটা গায়ে দিতে দিতে বলল
-আসুন না। ভেতরে এসে বসুন৷ বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবেন কেন?
মইন চৌধুরী ভেতরে ঢুকতেই খেয়াল করল নিবিড় কাপড় পরছে। সে চোখ ফিরিয়ে নিল৷ পরক্ষণেই মনের ভেতর থেকে কেউ একজন যেন বারবার বলছিল,একবার তাকাতে। দেখতে নিবিড়ের শরীর৷ মইন চৌধুরি নিজেকে অনেক দ্রুত সামলে নিয়ে বলল
-ক্ষেত দেখতে যাওয়ার কথা ছিল।
-জ্বি,আমার মনে আছে।
-আপনার নাস্তা হয়েছে?
-নাস্তা তো করেছি। কিন্তু আপনি আমাকে আপনি আপনি করছেন কেন? কাল তো তুমি করেই বলেছিলেন।
মইন চৌধুরি লজ্জা পেল। নিবিড় খেয়াল করেনি।

সুমন সকাল থেকেই ভাবছিল অহনাকে নিবিড়ের কথা বলবে৷ কিন্তু বারবার আটকে যাচ্ছিল। কিসে যেন তাকে বাধা দিচ্ছিল। অহনা ও হয়ত খেয়াল করছিল নিবিড় তাকে কিছু বলতে চাচ্ছে। তাই খাবার টেবিলে সুমন যখন বারবার অহনার দিকে তাকাচ্ছিল তখন অহনা নিজ থেকেই বলল।
-ভাইয়া কি কিছু বলবা?
সুমন নিজেকে সাবধানতার সাথে গুছিয়ে নিয়ে বলল
-না না৷ কিছু বলব না ত৷
মিতু পাশেই ছিল। সে নিজের মত করে খাচ্ছিল আর ভিন্ন একটা বিষয় ভাবছিল। সে ভাবছিল সুমন আর নিবিড়কে এক করে দেওয়াটা কতটুকু যুক্তিক৷সমাজ, ধর্ম তারুপরে লোকের নানান কথা। এত লড়াই করে যাকে সে স্বামী হিসেবে পেয়েছে তাকে ডিভোর্স দেওয়া অথবা আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে তাকে কী কী সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে তা ভেবে কোন কিনারা পাচ্ছিল না সে৷জীবনে এমন সিদ্ধান্তহীনতায় সে কখনো পড়েনি।
সুমন নিজের রুমে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল ঠিক সেই সময় অহনা রুমে ঢুকল। অহনাকে দেখে সুমন মুচকি হাসল। অহনা বিছানায় বসতে বসতে বলল
-ভাই কি বের হচ্ছ?
-হুম,বের হব।
-ঠিকানা ছাড়া কোথায় খোঁজবে?
সুমন অবাক হল৷ বিস্ময়ে চোখ কপালে তুলে বলল
-কার খোঁজ?
-তুমি জান কার খোঁজ৷ গতকাল রাতে কি তার সাথে দেখা হয়েছিল?
সুমন নিজের ভেতরের আনন্দটাকে চাপা দিয়ে মাথা নাড়ল। অহনা সুমন কে হাত দিয়ে টেনে বিছানায় বসিয়ে কাধে হাত রেখে বলল
-আমার দিকে তাকাও ভাইয়া।
সুমন তাকাল।অহনা বলল
-নিবিড় যে এই এলাকায় থাকে সেটা শুনেছি গতকাল৷ জাবের আমাকে বলল৷ আমি নিশ্চিত ছিলাম না৷ নিশ্চিত হয়েছি আজকে সকালে, তোমার চোখ দেখে৷ জান ভাইয়া,আমার তখন ই ইচ্ছে হচ্ছিল আমি নিবিড়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়৷ কতদিন ওকে দেখি না৷ কিন্তু কিসে যেন আমাকে আটকে দিল। তুমি জান, কেন আমি আটকে গিয়েছিলাম?
অপরাধবোধে থেকে। যে ছেলেটা আমার জন্য,তোমার জন্য এত করল। যে ছেলেটা তোমাকে এত ভালবেসেছিল তাকে ধোকা দেওয়ার অপরাধবোধ। ভাইয়া,তুমি ওর প্রতি যে অন্যায় করেছে তার পরে ও কি ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারবে? ভালবাসার পাপ অনেক বড়, সেই পাপ থেকে মুক্ত হওয়া এতটা সহজ না। আজ তুমি হুট করে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে আর ও সব ভুলে তোমাকে জড়িয়ে ধরবে? না ভাইয়া, জড়িয়ে ধরবে না। বরং ছেলেটা হেরে যাবে। তোমাকে ভুলার জন্য ওর এত দিনকার লড়ায়ে ও হেরে যাবে৷ তুমি শুধু নিজের সুখটাই দেখবে?
সুমন একটা কথা ও বলতে পারছে না। ও কেবল নিশ্চুপ হয়ে শুনে যাচ্ছে। ওর মাথায় নিবিড়ের নিষ্পাপ চেহারাটা ঘুরছে। গতকাল ঝড়ের মধ্যে ওর ছুটে যাওয়া।
অহনা চলে গেছে। সুমন হাজার প্রশ্নের ভিড়ে নিজেকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

নিবিড় যেমনটা বলেছিল তেমন ই।সারা ধান খেতে নৌকার ইঞ্জিনের তেল।মইন চৌধুরী দ্রুত আদেশ দিল নৌকা অন্যত্র বাধার জন্য। নিবিড় খুশি হল। খুশি হল এলাকার বাদ বাকি কৃষকরা ও৷গ্রাম প্রধান পাশেই ছিল। একটু সুযোগে নিবিড়কে ডেকে নিয়ে গেল
-যুবা মাস্টার এদিকে আসবেন একটু?
নিবিড়  গেল। ভদ্রলোক এমনিতে খুব জোরে কথা বললে ও এখন খুব আস্তে ই কথা বলছেন। মনে হচ্ছে কোন বিষয় নিয়ে গোপন অভিসন্ধি করছে৷
-মাইয়াডার ভালা একটা বিয়া আইছিল। জামাই বিদেশে থাহে। বড় ঘরের পোলা।
-কার বিয়ে? কইতরির?
-জে।কইতরি ছাড়া আমার আর মাইয়া আছে নাকি? কী যে কন না।
-কিন্তু ও ত বাচ্চা মেয়ে। পনেরো হল বৈকি। এখন কিসের বিয়ে?
-আপনি মত দিলেন না?
-না। এখানে মত দেওয়ার কিছু নেই।
-আইচ্ছা, তাইলে এই বিয়া বাদ। মাইয়া আমার পড়ুক।
নিবিড় মুচকি হেসে বলল
-বিয়ের জন্য এত অস্থির হবেন না ত। একটা ই মেয়ে আপনার। ওকে স্বাধীনতা দেন কিছু।
-আইচ্ছা, আইচ্ছা৷ আপনি যেমনে বলেন।
মইন চৌধুরী দূর থেকে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। কি অসাধারণ ছেলেটা। সবাইকে মুগ্ধ করার অদ্ভুত ক্ষমতা তার মধ্যে।যে কোন মেয়ে তাকে একবার দেখেই ভালবেসে বাকি জীবন কাটিয়ে দিবে অনায়াসে  কিন্তু তার কী হল? সে কেন নিবিড়ের প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে? কেন মনের ভেতর থেকে মায়া জাগ্রত হচ্ছে বারবার। মইন বুঝে পাচ্ছিল না তার মনের এমন পরিবর্তনের কী কারণ থাকতে পারে।

নিবিড় খেয়াল করল মইন চৌধুরী তার দিকে তাকিয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে। নিবিড়ের ভেতর মুচড়ে উঠল পুরানো স্মৃতি মনে পড়তেই৷ আজ থেকে অনেকগুলো বছর আগে সুমন ও ঠিক এভাবেই তার দিকে তাকিয়ে থাকত৷ সেই তাকিয়ে থাকার মধ্যে ভালবাসা উপচে পড়ত। মায়াতে সেই দৃষ্টি কাতরে উঠত। নিবিড় শত বার চেষ্টা করেছে সেই স্মৃতি ভুলে যেতে। সে পারেনি ভুলতে।

নদীর এই দিকটা খুব শান্ত। সুমন নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। একবার এক রাতে নদীর জলে জোসনা দেখার জন্য নিবিড় সুমনকে টেনে হেচড়ে নিয়ে গিয়েছিল।ভরা বর্ষায় নৌকা তখন মাঝে নদীতে। চাঁদের অপুর্ব স্নিগ্ধতায় নিবিড় মুগ্ধ হয়ে সুমন কে জড়িয়ে ধরল।নিবিড়ের স্পর্শে কী ছিল সুমন বুঝতে পারিনি তার চোখ ভিজে এল। সে নিবিড়ের ঠোটে চুমু খেতে গিয়ে খেয়াল করল তার চোখ ভিজে এসেছে। সুমন নিবিড়ের চোখে চুমু খেয়ে প্রশ্ন করল
-পানি কেন চোখে?
নিবিড় সুমন নিবিড়কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
-আমাকে ছেড়ে যাবে না ত?
-যেদিন তোমাকে ছেড়ে যাব সেদিন আমি নিজের জীবন ছেড়ে দিব। বুঝলে পাগল।
নিবিড় ঐ দিন আশ্বস্ত হয়েছিল। কিন্তু সুমন তার কথা রাখতে পারেনি।
 পড়ন্ত দুপুরে নদীর পাড়ে বসে বসে সুমন তার অতীতে ফিরে যাচ্ছিল বারবার। তার স্মৃতি আবিষ্ট হচ্ছিল নিবিড়ের খেয়াল। সুমন জানে নিবিড় এই অঞ্চলে ই আছে, কিন্তু কোথায় আছে সেটা সে জানে না। বের করাটা অসম্ভব না। কিন্তু বের করার পর দেখা হলে কী বলবে সে? কোন মুখে ই ফিরে আসার কথা বলবে?
জীবন তাকে সবচেয়ে বড় দোটানায় ফেলে দিয়েছে৷
-আরে, আফনে?
সুমন ফিরে তাকাল। কইতরি হাতে অনেকগুলো কদম ফুল৷ এই ভর দুপুরে কদম ফুল সে কোথায় পেল?
-আরে তুমি যে? কেমন আছ?
-আমি ত ভালই।
-স্কুল নেই আজ?
-জ্বি না৷ গরমের ছুডি চলে।
-এই ভরদুপুরে কদম ফুল কার জন্য?
-অ! এইগুলা? এইগুলা ত যুবা মাস্টারের লাগি। তাইনের কদম ফুল  বড়ই পিয়।
-তাই?
-জ্বি। আমার বিয়া ভাইঙ্গা গেছে। এই জন্য ওনারে ফুল দিমু ভাবছি।
-তোমাদের যুবা মাস্টারকে বুঝি খুব পছন্দ তোমার?
-খালি আমার না। এই দেশের হগলের ই পছন্দ।
আইচ্ছা,অহন যায়গা৷ আফনে যায়েন আমরা বাড়ি৷ সামনে ই।
-আচ্ছা, যাব।
কইতরি চলে গেল। সুমন নিজের মত করে ভাবতে লাগল নিবিড়ের কথা। কদম ফুল ওর খুব পছন্দ ছিল।তার সাময়িক সময়ের জন্য ভ্রম হল। মনে হল,কইতরি যে যুবা মাস্টারের কথা বলছিল সেটা নিবিড়।

স্কুল বন্ধ। নিবিড়ের তেমন কাজ নেই। সে গিয়েছিল শহরে৷ কিছু বই আনার জন্য। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা৷ মেঘনার ঐ পাড়ে তখন ঘন কালো মেঘ। মেঘের আড়ালে গোসাইপুর ঢাকা পড়ে গেছে।নিবিড় নৌকায় বসে ঘাবড়ে গেল। ঝড় যদি এখন শুরু হয় তবে তার সবগুলো বই ভিজে যাবে।মাঝি তয়ব আলী নিবিড়কে আশ্বস্ত করে বলল
-ভয় পায়েন না যুবা মাস্টার। তুফান আয়ব না।
তয়ব আলীর কথায় ঠিক হল। তুফান আসেনি। কিন্তু বাতস ছিল প্রচুর। নিবিড় নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে বইগুলো নিয়ে ঘরে ঢুকল।মশালটা জ্বালিয়ে মাটিতে পুঁততেই ঝড় শুরু হল। এমন সময় দরজায় শব্দ।নিবিড় দরজা খোলে ফিরতেই তার বুকটা কেমন করে উঠল সে পুনরায় ফিরে তাকাল। সুমন দাঁড়িয়ে৷ তার চুল থেকে পানি পড়ছে।সে থরথর করে কাঁপছে৷ নিবিড়ের পিঠ দিয়ে একটা শীতল রক্তের স্রোত বয়ে গেল। সুমন কিছু বলতে যাবে ঠিক সেই সময় ব্রজপাত হল আর সাথে সাথে দমকা বাতাসে মশালটা নিভে গেল।
অন্ধকার ঘরে দুজন মানুষ, যারা পরস্পরের ভালবাসায় জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে৷তাদের একজন চাচ্ছে পুনঃমিলন৷ আরেকজন চাচ্ছে শূণ্যস্থান।  ইশ্বর কি তাদের মিলিয়ে দিবে?
........(চলবে)........
শূণ্যস্থান-৪ শূণ্যস্থান-৪ Reviewed by সমপ্রেমের গল্প on August 03, 2020 Rating: 5

3 comments:

  1. Pls reunite them and make a happy ending for the story.I beg you.

    ReplyDelete
  2. শূন্যস্থান গল্পের পরবর্তী পর্ব গুলো চাই... প্লিজ প্লিজ প্লিজ যত দ্রুত সম্ভব শেয়ার করুন.. অতি আগ্রহের সাথে বসে আছি পরবর্তী পর্বগুলো পড়ার জন্য

    ReplyDelete
  3. ভাইয়া পরের পর্ব কবে দিবেন দয়া করে বলুন

    ReplyDelete

Powered by Blogger.