গল্পঃ চন্দ্রের কাল
লেখকঃ আরভান শান আরাফ
-----------------------------------
আমি বাবার ছোট ছেলে। আমার বড় যে ভাই, সে আমার দু মিনিটের বড়।
এক শীতের শেষ রাত্রে আমার মায়ের কোল আলো করে আমাদের জন্ম। বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না, হারিকেনের আলোতে নানা আমাদের দুই ভাইকে দেখে বলেছিলেন মাশাল্লাহ, চাঁন্দের টুকরা।
দিন গেল,মাস গেল, বছর পরে সেই চান্দের টুকরারা বড় হয়ে গেলো।
যে আমার বড়। মাত্র দু মিনিটের যে বড় তার নাম নাহিদ আর আমার নাম সুমন। নাহিদ সুমন খুব বিখ্যাত কেউ না হলে ও কুখ্যাত তো ছিল ই। তবে লোক বলে নাহিদ নাকি মাটির ছেলে। এমন ভাল আর শান্ত ছেলে ত্রিগ্রামে নেই। আমার কিন্তু তা মনে হয় না। হ্যা,নাহিদের বড় বড় শান্ত চোখ, ফর্সা গায়ের রং, মিষ্টি বচন ভঙ্গি। এতে তো আর কেউ ভাল হয়ে যায় না। তবে হ্যা, আমার ভাইটি আসলেই খুব ভালো। আমার কাছে না হোক মহল্লার বাকি দশবারো জন লোকের কাছে তো বটে ই।
নাহিদ কে আমি ভাই হিসেবে পছন্দ করি না। করার তো প্রশ্ন ই ওঠে না। কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে প্রপোজ করলাম আমি আর সেই মেয়ে বলে সে আমাকে নয় নাহিদকে ভালবাসে। সহ্য করা যায়? একদম ই না। তাই তো রাগে নাহিদের সাথে দু দিন কথা বলেনি। শেষমেষ ওর নতুন কেনা টি শার্টটা দিয়ে দেওয়াতে কথা বললাম।শত হলে ও ভাই তো। কিছু দিলে আবার মানা করা উচিত নয়।
ভদ্র, শান্ত, ব্রিলিয়্যান্ট ছেলে হিসেবে নাহিদ বরাবর ই আমার উপরে। মা মাঝে মাঝে রেগে গেলে বলেন, তোরা দুইটা জমজ ভাই হয়ে ও দুশমনের মত থাকিস কেন? আমি মার এসব কথায় পাত্তা দেয় না। হতে পারে ভাই তাই বলে দুশমনি ছেড়ে দিবো? কখনো ই নয়। পরিক্ষার খাতায় হতে পারে ওর থেকে কপি করে আমি লিখি কিন্তু তার বিনিময়ে ওকে তো আমি প্রায় সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে দেয় পড়ার জন্য। ও তখন পড়ে, আরআমি ঘুমাই। একই রুমে দু ভাই আলাদা দুইটা খাটে থাকি, আলাদা দুটা পড়ার টেবিলে পড়ি। এখন আমি পড়ছি অনার্স ২য় বর্ষে আর ও ৩য় বর্ষে। এইচ এস সি তে আমি ইংরেজিতে খারাপ করেছিলাম। গার্ড খুব হার্ড হওয়াতে ওর কাছ থেকে তেমন দেখে লিখতে পারি নি। তাই বলে আমি কিন্তু লেখা বাদ দেইনি। খুব লেখিছি। তবুও কেন জানি ফেইল করলাম। কিন্তু একটা ঘটনা যা আমার আর নাহিদ দুজনের জীবনই পাল্টে দিল।
আজ সে গল্প ই লিখতে বসেছি।
আমাদের মফস্বল শহরে সব কিছু পাওয়া যায় না। এই জন্য যেতে হয় বিভাগীয় শহরে। গত মাসে নাহিদ গিয়েছিলো কিছু কেনাকাটার জন্য। সকাল সাতটার দিকে গেলে ও তার ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল প্রায় সন্ধ্যা হয় হয়। মোবাইল বন্ধ ছিল আর আমি ছিলাম বাড়িতে। অস্থিরতায় সবার সময় কাটছিল। কারন এর আগে নাহিদ কখনো এত দীর্ঘ সময় বাহিরে থাকেনি। যখন সে ফিরলো তখন তার শরীরের বেশ জ্বর। জ্বরের প্রতাপে রুমে ঢুকতেই বিছানায় ধপ করে পড়ে গেল। আমি জানতে চায়নি কেন দেরি হলো। ভেবেছিলাম তাকে সময় দেওয়া উচিত।
ডাক্তার ডাকতে চলে গেলাম।
এর দু দিন পরে নাহিদ অনেকটা সুস্থ্য হয়ে গিয়েছিল। বারান্দায় বসে বসে কী জানি একটা বই পড়ছিলো আর মাঝে মাঝে মুখ তুলে আকাশ দেখছিলো। বর্ষার আকাশে তখন মেঘ জমে কালো হয়েছিল। মনে হচ্ছিল এক্ষণি বৃষ্টি নামবে। আমি তার পাশে বসলাম। সে ফিরে তাকালো, কিন্তু কিছু বলল না। আমার মনে হচ্ছিল নাহিদ কিছু লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে। আমি একটু ত্যাড়া, নাহিদ সেটা জানে। হয়তো আমি ওর সাথে আমার কোন কিছু ভাগাভাগি করি না কিন্তু নাহিদ করে। আর সেই দাবী নিয়ে ই নাহিদ কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ব্যপার কী? নাহিদ কিছু বলেনি। বইটা পাশের টেবিলে রেখে কিছু না বলে চলে গেলো। আমি জানতাম কিছু একটা ঘটেছে। যা নাহিদ আমাকে বলতে চাচ্ছে না। নাহিদের সাথে আমার একটা অদ্ভুত সম্পর্ক ছিলো। সারাদিন প্রচার করতাম ও আমার ভাই নয়, বন্ধু নয়, দুশমন। কিন্তু আমি জানি আমার মনের পুরোটা দিয়ে আমি আমার ভাইটিকে শ্রদ্ধা করি ওর সততার জন্য, ভালবাসি ওর বিনয়ের জন্য, স্নেহ করি ওর সাফল্যের জন্য। বাহিরে যা দেখাই তা কেবল ভেতরটা লুকিয়ে রাখার জন্য। সেটা আর কেউ না বুঝতে পারুক নাহিদ ঠিক ই বুঝে।
নাহিদ পাল্টে যাচ্ছিল। সারাক্ষণ কার্টুন দেখা ছেলেটা সারাক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকে অথচ পড়ে না এক বর্ণ ও। কী যেন ভাবে? তার সেইভাবনাটা জানার আগ্রহে সেই দিন রাতে প্রশ্ন করেছিলাম, ভাই তোর কী হইছে রে? সে মুচকি হেসে উত্তর দিয়েছিলো কিছু না তো। আমি নাহিদের হাসি দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম ওটা নকল হাসি। আশ্চর্য, নাহিদ তো এমন নকল হাসিতে কাউকে ভোলাতে চায়তো না। কী হল তার? হোলোটা কী?
যা করার আমাকে ই করতে হবে । জানি নাহিদ কিছু বলবে না। ওর জীবনে তো কোন অঘটন ঘটেছে ই । সেটা আমাকে ই তালাশ করতে হবে। আমি আমার ভাইকে এইভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। আমাকে তো ও কোন দিন ছেড়ে দেয়নি। এর আগে, নাহিদ কোথায় যেত, কী করতো সব কিছু আমি জানতাম। কিন্তু আজকাল নাহিদ অদ্ভুতভাবে তা লুকিয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে লুকানোর কী আছে? তাই একদিন সত্য ই বের হয়ে গেলাম গোয়েন্দা হয়ে। এই গোয়ান্দাগিরী ভাইয়ের জন্য।
নাহিদের একটা ডায়েরি ছিল, যেট
লেখকঃ আরভান শান আরাফ
-----------------------------------
আমি বাবার ছোট ছেলে। আমার বড় যে ভাই, সে আমার দু মিনিটের বড়।
এক শীতের শেষ রাত্রে আমার মায়ের কোল আলো করে আমাদের জন্ম। বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না, হারিকেনের আলোতে নানা আমাদের দুই ভাইকে দেখে বলেছিলেন মাশাল্লাহ, চাঁন্দের টুকরা।
দিন গেল,মাস গেল, বছর পরে সেই চান্দের টুকরারা বড় হয়ে গেলো।
যে আমার বড়। মাত্র দু মিনিটের যে বড় তার নাম নাহিদ আর আমার নাম সুমন। নাহিদ সুমন খুব বিখ্যাত কেউ না হলে ও কুখ্যাত তো ছিল ই। তবে লোক বলে নাহিদ নাকি মাটির ছেলে। এমন ভাল আর শান্ত ছেলে ত্রিগ্রামে নেই। আমার কিন্তু তা মনে হয় না। হ্যা,নাহিদের বড় বড় শান্ত চোখ, ফর্সা গায়ের রং, মিষ্টি বচন ভঙ্গি। এতে তো আর কেউ ভাল হয়ে যায় না। তবে হ্যা, আমার ভাইটি আসলেই খুব ভালো। আমার কাছে না হোক মহল্লার বাকি দশবারো জন লোকের কাছে তো বটে ই।
নাহিদ কে আমি ভাই হিসেবে পছন্দ করি না। করার তো প্রশ্ন ই ওঠে না। কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাকে প্রপোজ করলাম আমি আর সেই মেয়ে বলে সে আমাকে নয় নাহিদকে ভালবাসে। সহ্য করা যায়? একদম ই না। তাই তো রাগে নাহিদের সাথে দু দিন কথা বলেনি। শেষমেষ ওর নতুন কেনা টি শার্টটা দিয়ে দেওয়াতে কথা বললাম।শত হলে ও ভাই তো। কিছু দিলে আবার মানা করা উচিত নয়।
ভদ্র, শান্ত, ব্রিলিয়্যান্ট ছেলে হিসেবে নাহিদ বরাবর ই আমার উপরে। মা মাঝে মাঝে রেগে গেলে বলেন, তোরা দুইটা জমজ ভাই হয়ে ও দুশমনের মত থাকিস কেন? আমি মার এসব কথায় পাত্তা দেয় না। হতে পারে ভাই তাই বলে দুশমনি ছেড়ে দিবো? কখনো ই নয়। পরিক্ষার খাতায় হতে পারে ওর থেকে কপি করে আমি লিখি কিন্তু তার বিনিময়ে ওকে তো আমি প্রায় সকালে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে দেয় পড়ার জন্য। ও তখন পড়ে, আরআমি ঘুমাই। একই রুমে দু ভাই আলাদা দুইটা খাটে থাকি, আলাদা দুটা পড়ার টেবিলে পড়ি। এখন আমি পড়ছি অনার্স ২য় বর্ষে আর ও ৩য় বর্ষে। এইচ এস সি তে আমি ইংরেজিতে খারাপ করেছিলাম। গার্ড খুব হার্ড হওয়াতে ওর কাছ থেকে তেমন দেখে লিখতে পারি নি। তাই বলে আমি কিন্তু লেখা বাদ দেইনি। খুব লেখিছি। তবুও কেন জানি ফেইল করলাম। কিন্তু একটা ঘটনা যা আমার আর নাহিদ দুজনের জীবনই পাল্টে দিল।
আজ সে গল্প ই লিখতে বসেছি।
আমাদের মফস্বল শহরে সব কিছু পাওয়া যায় না। এই জন্য যেতে হয় বিভাগীয় শহরে। গত মাসে নাহিদ গিয়েছিলো কিছু কেনাকাটার জন্য। সকাল সাতটার দিকে গেলে ও তার ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল প্রায় সন্ধ্যা হয় হয়। মোবাইল বন্ধ ছিল আর আমি ছিলাম বাড়িতে। অস্থিরতায় সবার সময় কাটছিল। কারন এর আগে নাহিদ কখনো এত দীর্ঘ সময় বাহিরে থাকেনি। যখন সে ফিরলো তখন তার শরীরের বেশ জ্বর। জ্বরের প্রতাপে রুমে ঢুকতেই বিছানায় ধপ করে পড়ে গেল। আমি জানতে চায়নি কেন দেরি হলো। ভেবেছিলাম তাকে সময় দেওয়া উচিত।
ডাক্তার ডাকতে চলে গেলাম।
এর দু দিন পরে নাহিদ অনেকটা সুস্থ্য হয়ে গিয়েছিল। বারান্দায় বসে বসে কী জানি একটা বই পড়ছিলো আর মাঝে মাঝে মুখ তুলে আকাশ দেখছিলো। বর্ষার আকাশে তখন মেঘ জমে কালো হয়েছিল। মনে হচ্ছিল এক্ষণি বৃষ্টি নামবে। আমি তার পাশে বসলাম। সে ফিরে তাকালো, কিন্তু কিছু বলল না। আমার মনে হচ্ছিল নাহিদ কিছু লুকাচ্ছে আমার কাছ থেকে। আমি একটু ত্যাড়া, নাহিদ সেটা জানে। হয়তো আমি ওর সাথে আমার কোন কিছু ভাগাভাগি করি না কিন্তু নাহিদ করে। আর সেই দাবী নিয়ে ই নাহিদ কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ব্যপার কী? নাহিদ কিছু বলেনি। বইটা পাশের টেবিলে রেখে কিছু না বলে চলে গেলো। আমি জানতাম কিছু একটা ঘটেছে। যা নাহিদ আমাকে বলতে চাচ্ছে না। নাহিদের সাথে আমার একটা অদ্ভুত সম্পর্ক ছিলো। সারাদিন প্রচার করতাম ও আমার ভাই নয়, বন্ধু নয়, দুশমন। কিন্তু আমি জানি আমার মনের পুরোটা দিয়ে আমি আমার ভাইটিকে শ্রদ্ধা করি ওর সততার জন্য, ভালবাসি ওর বিনয়ের জন্য, স্নেহ করি ওর সাফল্যের জন্য। বাহিরে যা দেখাই তা কেবল ভেতরটা লুকিয়ে রাখার জন্য। সেটা আর কেউ না বুঝতে পারুক নাহিদ ঠিক ই বুঝে।
নাহিদ পাল্টে যাচ্ছিল। সারাক্ষণ কার্টুন দেখা ছেলেটা সারাক্ষণ বই নিয়ে বসে থাকে অথচ পড়ে না এক বর্ণ ও। কী যেন ভাবে? তার সেইভাবনাটা জানার আগ্রহে সেই দিন রাতে প্রশ্ন করেছিলাম, ভাই তোর কী হইছে রে? সে মুচকি হেসে উত্তর দিয়েছিলো কিছু না তো। আমি নাহিদের হাসি দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম ওটা নকল হাসি। আশ্চর্য, নাহিদ তো এমন নকল হাসিতে কাউকে ভোলাতে চায়তো না। কী হল তার? হোলোটা কী?
যা করার আমাকে ই করতে হবে । জানি নাহিদ কিছু বলবে না। ওর জীবনে তো কোন অঘটন ঘটেছে ই । সেটা আমাকে ই তালাশ করতে হবে। আমি আমার ভাইকে এইভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। আমাকে তো ও কোন দিন ছেড়ে দেয়নি। এর আগে, নাহিদ কোথায় যেত, কী করতো সব কিছু আমি জানতাম। কিন্তু আজকাল নাহিদ অদ্ভুতভাবে তা লুকিয়ে যাচ্ছে। আমার কাছে লুকানোর কী আছে? তাই একদিন সত্য ই বের হয়ে গেলাম গোয়েন্দা হয়ে। এই গোয়ান্দাগিরী ভাইয়ের জন্য।
নাহিদের একটা ডায়েরি ছিল, যেট
চন্দ্রের কাল
Reviewed by সমপ্রেমের গল্প
on
February 20, 2019
Rating:
No comments: